Monday, July 9, 2018

হাতুঁড়ি দিয়ে কী যৌক্তিক আন্দোলন দাবিয়ে রাখা যায় ?

হাতুঁড়ি দিয়ে কী যৌক্তিক আন্দোলন দাবিয়ে রাখা যায় ?
======================================
হাতুঁড়ির সাথে পরিচয় আমার সেই ছোট্ট বেলা থেকে। বাড়ির সংস্কার কাজের জন্য বাবা মাঝে মধ্যে মিস্ত্রি ডাকতেন তখন তাদের কাছে ঐ যন্ত্রটা দেখতাম । যন্ত্রটার শক্তি তখন আমাকে বিমোহিত করত! এর আঘাতের আওয়াজ মনে পুলক দিত। সেই ছোট্ট বেলায় ঐ যন্ত্রটা ছুঁয়ে দেখেতে মনটা ভীষণ চাইত কিন্তু সে সুযোগ খুব একটা হত না; হতনা মিস্ত্রি বেটার জন্য। তবে সুযোগ বুঝে তখন যে দু-চার’বার হাতুঁড়ি ছুঁই নাই এমনটি নয় । তবে সাথে বকুনিও খেতাম নিজ পরিবার এবং হাতুঁড়ির মালিকের কাছ থেকে।তখন ওটার সঠিক ভাবে ব্যবহার জানতাম না বলে ওসব ধরা কিংবা ব্যবহার একবারেই নিষিদ্ধ ছিল। 


একটু বড় হয়ে বিজ্ঞানের মাধ্যমে জানলাম হাতুঁড়ি, যাতি, সেচ যন্ত্র,.. ইত্যাদি শুধুই বস্তু নয় এর বৈজ্ঞানিক কিছু শক্তি রয়েছে। এর গুণাগুণের জন্য অল্প বল প্রয়োগের মাধ্যমে অধিক কাজ করা সম্ভব । যা বাঁশ দ্বারা সম্ভব নয়। কারণ বাঁশ দ্বারা যদি আপনি কাউকে আঘাত করেন তার চেয়ে একটু বেশি ফল হাঁতুড়ির দ্বারা আঘাতের ফলে পাবেন এটা নিশ্চিত । আর এ শক্তিকে বলে যান্ত্রিক শক্তি । দেখেন না হাতুঁড়ির শক্তি দ্বারা মানুষ কত সহজে লোহাকে কাঠের মধ্যে ঠুকিয়ে দেয় । বাঁশের মাধ্যমে কী আপনি পারবেন লোহাকে কাঠের মধ্যে ঠুকতে ?না , পারবেন না!
এ বৈজ্ঞানিক উপলব্ধিটুকু মনে হয় মামুনরা বুঝে ফেলেছেন বিগত কয়েক বছরে ! তাইতো তারা লঘি/বাঁশ ফেলে হাতুঁড়ি নিয়ে তরিকুলদের শরীরের উপর তা প্রয়োগ করতে শুরু করেছেন । অবশ্য রাজশাহী বিশ্ব বিদ্যালয়ের মামুন হাতুঁড়ির ব্যবহারে এগিয়ে গেলেও ঢাকা সহ অন্যান্যা যায়গায় তার সহযোদ্ধারা কিন্তু বাঁশ দিয়েই কোটা সংস্কারের আন্দোলনে আন্দোলনরতদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছেন । সাপ পিটাবার মত তারা ছাত্রদের পিটিয়েছেন । বাঁচার জন্য এক ছাত্রকে শিক্ষকের পা জড়িয়ে ধরে বলতে শুনেছি “ স্যার আমাকে বাঁচান !”। তাতেও তার শেষ রক্ষা হয়নি।
মানুষ কত টা নিষ্ঠুর হলে এমন করে নিরাপরাধ মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে তা বিবেকবান মানুষ কাছে প্রশ্ন।



মামুনদের হাতুঁড়ি/বাঁশ পেটায় তরিকুল ,ফারুক, মরিয়ম, নুরুদের আহতের ঘটনায় যতটা না আশ্চার্য হয়েছি তার চেয়ে ঢের আশ্চার্য হয়েছে পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভুমিকায় । নুরু রা কী এমন অপরাধ করেছে যে তারা আহত হয়ে, পঙ্গু হয়েও দেশের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার নূন্যতম সুযোগটুকু পেল না ? বড় বড় সরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদেরকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছে । যা ইতিহাসের অন্যতম অমানবিক অধ্যায়ের সূচনাই বলা যায়। যত বড় অপরাধী হোক না কেন তার চিকিৎসা সেবা পাওয়া সাংবিধানিক অধিকার। নুরু, মামুন, ফারুক সহ অন্যান্যাদের সে সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হলো।
পুলিশ, হাসপাতাল, প্রশাসন,বিশ্ববিদ্যালয়, রাস্তাঘাট ইত্যাদি সবার জন্য সমান। এসব যায়গায় রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের সমান সুযোগ সুবিধা রাষ্ট্রের সংবিধানে লিপিবদ্ধ।
শুধু বইয়ের পাতায় কালির অক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকেলেই হবে না। সবার ক্ষেত্রে তার সমান প্রয়োগ দেখা একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্রের প্রতিচ্ছবি। কিন্তু আমরা তা দেখতে পাচ্ছি ?
অপরদিকে হতবাক হওয়ার মত ঢাবি এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপচার্য মহোদয়রা যেভাবে এ আন্দোলনকে কটাক্ষ করছেন তা শুনে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, “তালেবান জঙ্গিরা বিভিন্ন গোপন আস্তানা থেকে যে রকম উসকানিমূলক ভিডিও বার্তা পাঠায়, তার অবিকল উগ্র চরমপন্থি মতাদর্শী প্রচারণামূলক ভিডিও আমি নিজে দেখেছি।” অর্থ্যাৎ তিনি এ আন্দোলনকে জঙ্গি তোকমা দিয়ে ফতোয়া দিয়েছেন।
আর অপরদিকে রাজশাহী বিশ্ব বিদ্যালয়ের উপচার্য মহোদয় আন্দোলনকারীদের বাশি বলে সংজ্ঞায়িত করেছেন।
যে ছাত্ররা কোটা সংস্কারের আন্দোলন করছেন, তাঁদের বাম ঘরানার শিবির, সংক্ষেপে ‘বাশি’ বলে অভিহিত করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রের দুটি পায়ের ভাঙা হাড়ের এক্স-রের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে গেছে। তাঁর দুটি পা-ই ভেঙে দিয়েছে ছাত্রলীগের পদধারী হাতুড়িবিদ্যায় পারদর্শী মামুন নামধারী কিছু দুর্বৃত্তরা। পঙ্গুত্বের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা ছাত্র তরিকুল ইসলামকে উপাচার্য হাসপাতালে দেখতে যাননি। তিনি তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যাঁদের বাশি বলে উপহাস করেছেন, তরিকুল তাঁদেরই একজন।
অপরদিকে গতকাল কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনকে যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত বলেছেন ইমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। গতকাল সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত নিপীড়নবিরোধী পদযাত্রায় তিনি এ কথা বলেন। গতকাল(৮/৭/২০১৮) রবিবার বেলা ১১টায় ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকবৃন্দের’ ব্যানারে ঢাবি ক্যাম্পাসে পদযাত্রাটি বের হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা, গ্রেফতার, সহিংসতা ও হয়রানির প্রতিবাদে পদযাত্রা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকসহ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
সমাবেশে শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “যে ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক, লজ্জাজনক ও অবিশ্বাস্য। এটি পাকিস্তান বা ব্রিটিশ আমলেও ঘটেনি। তিনি বলেন, কোটা আন্দোলন যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত। এজন্য ছেলেমেয়ে, অভিভাবক, শিক্ষক সবাই এতে সমর্থন দিয়েছে। ৫৬ শতাংশ কোটা অত্যন্ত অযৌক্তিক।”
ওদের দাবী যদি যৌক্তিই হয় তাহলে ওদের কে কেন হাতুঁড়িপেটা, লঘি/বাঁশ পেটা করা হলো? ছাত্রীদের কেন লাঞ্ছিত করা হলো? কেন ওরা হামলার প্রতিকার এখন পর্যন্ত পেল না? কেন ওরা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পেল না? এ সব প্রশ্নের উত্তর দিবে কে ???
এস এম কামাল হোসেন
তারিখ:০৯/৭/২০১৮

No comments:

Post a Comment

A BROKEN DREAM- chapter -one

A BROKEN DREAM Status of Rule of Law, Human Rights and Democracy Justice Surendra Kumar Sinha Chief Justice (Rtd.), Supreme Court ...