গত ১৫ জুলাই ভারতীয় ক্রিকেটার হরভজন সিং এক
টুইটবার্তায় বলেছেন, ৫০ লাখের জনসংখ্যার একটা দেশ ক্রোয়েশিয়া বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলছে। আর
আমরা ১৩৫ কোটির দেশ হিন্দু-মুসলমান খেলছি।’ হরভজন তার দেশের মানুষের ধর্মান্ধতার এই
খেলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। মনোভাব পাল্টানোর আহ্বান জানিয়েছেন। হিন্দিতে লিখেছেন,
‘সোচ বদলো, দেশ বদলেগা।’ অর্থ হলো, ‘ভাবনা বদলাও, তাহলে দেশ বদলাবে।’
বন্ধুরা, এই টু্ইটবার্তায়
একটা ইঙ্গিত আছে যার মমার্থ খুবই গভীর থেকে গভীরতর। আমরা-আপনারা যারা পেপার পত্রিকা
পড়ি তারা হয়ত কিছুটা জানি ভারতে প্রতিনিয়ত
কীরকম স্টিম রোলার চলছে মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর। আর তা জাস্টিফাই করার জন্য হরভজন
সিং এর সামান্য একটি টুইট বার্তাই যথেষ্ট । উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রের হিংস্র
নারকীয়, দানবীয় জ্বালাতন সহ্য না করে স্বয়ং ভারতীয় সিনেমা জগতের সুপার স্টার আমির
খাঁন কয়েক মাসেক পুর্বে ভারত থেকে পালাবার
চিন্তা করছেন বলে গণমাধ্যমে এসেছে ।
দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত
এখন সেই দেশ, যে দেশে গরু জবাইর অপরাধে
(!) মানুষকে জবাই করা হয়। ভারত এখন সেই
দেশ – যে দেশে গরুর গোশত খাওয়ার অপরাধে মুসলিম জনগোষ্ঠীকে বাড়ি-ঘর থেকে টেনে পরিবারের
সবার সামনে যুবতি মা-মেয়েকদেরকে গণধর্ষণ করা হয় । আজ ভারতে মিডিয়ায় টক শো’র নামে আলেম ওলামাদেরকে ডেকে এনে আর এস এস মহিলা কর্মী দ্বারা লাইভে তাদেরকে চড়- থাপ্পর
মাড়ার মাধ্যমে প্রকারন্তরে মুসলিম জনগোষ্ঠী
কে প্রকাশ্য অপমান করা হচ্ছে । আর ভারত তার সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা দিতে যেখানে
চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে সেখানে সে কি করে অন্য দেশের সংখ্যা লঘুদের নিয়ে মাথা
ঘামায় ?
আমরা কী গুজরাটের ঘটনা ভুলি গেছি ? বাবরী মসজিদ
ভাঙ্গার স্মৃতি মুসলমানদের হৃদয় থেকে কী মুছে যাবার ? 19৪৯ সনে প্রায় ২ লক্ষ বিহারী মুসলিম নারী পুরুষকে
অমানবিকভাবে খুন-যখম এবং ২০ লক্ষ নারী
পুরুষকে তাদের জন্মভুমি থেকে তাড়িয়ে তৎকালীন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্থানে বিতাড়িত করার
ক্ষতও আমাদের ভুলার নয় ।
তদ্রুপ অতি
সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে ১৩ লক্ষ রোহিঙ্গাদের
তাদের প্রিয় জন্মভুমি থেকে বাংলাদেশে রামু- টেকনাফের পাহাড়ে মানবতার জীবন যাপনের
পিছনে যে ভারতের হাত রয়েছে তা তিনটি কারণে
প্রমান করা যায় । এক, উপমহাদেশে ভারত ই প্রথম মুসলিম বিহাড়ীদের জন্মভুমি
বিহার রাজ্য থেকে তৎকালীন পাকিস্থানে বিতাড়িত করার নজির সৃষ্টিকারী রাষ্ট্র ; দুই.1947 এরপর থেকেই
ভারতের সরকারের রয়েছে মুসলিম বিদ্বেষী মনোভাব; তিন. রোহিঙ্গা স্রোত বাংলাদেশের শুরুর
দ্বিতীয় দিনে ভারতের রাষ্ট্রপতি নরেন্দ্র মোদি মিয়ানমান সফর এবং অতঃপর রোহিঙ্গা স্রোত
বেগবান।
এবার আসি মুল কথায়,গত বৃহস্পতিবার, ১৯/৭/২০১৮ তারিখ রাজ্যসভায় প্রশ্নোত্তরপর্ব চলার সময়
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ লিখিতভাবে
তিনি বাংলাদেশে হিন্দুদের সংখ্যা
২%বেড়েছে বলে জানান।
তিনি
বলেন, বাংলাদেশ সরকার নিশ্চিত করেছে, সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের ঘটনা কড়া হাতে দমন
করা হবে। তাঁর তথ্য মতে বাংলাদেশে ২০১১ সালে
৮.৪ শতাংশ হিন্দুর বাস ছিল ২০১৭ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১০.৭ শতাংশ।
বন্ধুরা
একটু খেয়াল করবেন, সুষমা এখানে তার নিজ
দেশ নয়, তার প্রতিবেশি রাষ্টে তার ধর্ম মতের লোকের নিরাপত্তার এবং সংখ্যা কত বাড়ল
সেটা তিনি তাঁর রাজ্য সভায় উপস্থাপন করেছেন । অর্থ্যাৎ আমাদের দেশের হিন্দু জনগোষ্টী
লোকের শুধু নিরাপত্তা নিয়েই নয় তাদের জনসংখ্যা কত বাড়ল সে বিষয় ও গভির মনোযোগ
দিয়েছেন । আমি বলবো, একটা স্বাধীন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে তাদের মাথা ঘামানো কুটনৈতিক
শিষ্টাচার বর্হিভূত। যা একটি স্বাধীন দেশের উপর নগ্ন হস্তক্ষেপ!
বন্ধু, আমার সাথে একমত হতে পারছেন না এই তো ? দেখেন মোদী সরকার ভারতে আসার পর ভারতে মুসলিম জনগোষ্ঠীকে কোরবানীতেও গরু জবাই করতে দিচ্ছে
না । কৈ, আমার দেশের রাষ্ট্র, সরকার, পার্লামান্টে এ নিয়ে তো কোন কথা বলেনি কিংবা
বলা প্রয়োজন বোধ করেনি। কারণ, বাংলাদেশ
মনে করে ওটা তাদের রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ
বিষয় এবং এ বিষয় কথা বলা কুটনৈতিক শিষ্টাচারের বর্হিভুত । অথচ ভারত কিন্তু এসব
বিষয় প্রায়ই সীমা লংঘন করে । আমার মতে এদেশের ষোলোকোটির বেশিরভাগ মানুষ ভারতের এ
রকম নগ্ন হস্তক্ষেপ কে ঘৃণা করে। ভারতের উচিৎ
তার প্রতিবেশি রাষ্ট্রকে যথাযথ সম্মানের দৃষ্টিতে দেখা এবং তার স্বাধীনতায় নগ্ন হস্তক্ষেপ
না করা।আর হ্যাঁ, ভারতের মুখে তখনই বাংলাদেশে বিষয় কথা বলার সুযোগ থাকত যদি তার
দেশে ঠিক ঐ সব ঘটনা না ঘটতো কিংবা রাষ্ট্রীয় ভাবে না ঘাটাতো । আর যাই হোক চালন হয়ে
সুঁইয়ের ফুটার দিকে নজর দেওয়া বড্ড বেমানন!
এস
এম কামাল হোসেন
তারিখঃ22/7/2018
No comments:
Post a Comment