Header Ads

Bangladesh Is a .....

অর্থনীতিতে লুটপাট লুটপাটের রাজনীতি


দেশ চলছে উন্নয়নের মহাসোপানে!চলছে উন্নয়নের নামে মহা বানিজ্য।

পদ্মা সেতু, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, উড়াল সেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রো রেল, মেগা সুপার শপ, কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল- মেগা সব প্রজেক্টের নেশা ধরানো বর্ণনা শুনতে শুনতে মানুষকে মোহগ্রস্ত করে রাখার চেষ্টা চলছে এর ফাঁকে লুট হয়ে যাচ্ছে হাজার-লক্ষ-কোটি টাকার জনগণের সঞ্চয়, ব্যাংকের আমানত রাজনৈতিক ক্ষমতা, রাষ্ট্র ক্ষমতা হলো এই লুটপাটের প্রধান হাতিয়ার নির্বাচনে মনোনয়ন, কমিটিতে পদপ্রাপ্তি, চাকরিতে নিয়োগ-বদলি, টেন্ডার, স্কুল-কলেজে ভর্তি সবকিছুর সাথে অবধারিতভাবে একটি শব্দ যুক্ত হচ্ছে তা হচ্ছে বাণিজ্য এদিকে, রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে লুটপাট এখন লুটপাটের-রাজনীতিতে পরিণত 


দেশের অর্থভান্ডার ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চলছে সীমাহীন লুটপাট একের পর এক প্রকাশ হয়ে পড়ছে বিপুল পরিমাণের আর্থিক কেলেঙ্কারীর সব কাহিনী সরকারি বেসরকারি, বাণিজ্যিক কোনো ব্যাংক- এসব লুটপাটের ঘটনার বাইরে নয় সবকয়টি কেলেঙ্কারীতে যুক্ত রয়েছে সরকারি কিছু আমলা, ব্যাংকের পরিচালকমন্ডলীর কতিপয় সদস্য, ব্যাংকের এক শ্রেণির কর্মকর্তা এবং ক্ষমতাসীন সরকার শাসক দলের ক্ষমতাসম্পন্ন বিশেষ কিছু ব্যক্তিবর্গ 
ঋণখেলাপির বিষয়টি ব্যাংকের সাথে যুক্ত বিষয় হলেও বাংলাদেশে এর রাজনৈতিক সম্পৃক্তি ব্যাপকমাত্রায় লক্ষ্য করা যায় অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, গত বছরের জুন মাস পর্যন্ত সিআইবি ডাটাবেজে সংরক্ষিত ঋণ তথ্য অনুসারে সকল ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপির সংখ্যা লাখ ৪৫ হাজার ১৬২ জন

খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮২ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা এর মধ্যে রাইট-অফ বা অবলোপন (ব্যাংকের মূল হিসাব থেকে আলাদা করে রাখা) বাদ দিয়ে খেলাপি ঋণ হলো ৫১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা অনেক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পরিচালকদের ঋণও অবলোপন করা হয়েছে খেলাপিঋণ থাকলে পরিচালক হওয়ার কথা নয় কিন্তু তারা কাজটা করছে বেনামে 

সরকারি ব্যাংকগুলোতে অনিয়ম-দুর্নীতি বেড়ে যাওয়ার জন্য দলীয়করণ প্রধানত দায়ী আওয়ামী লীগ বা বিএনপি প্রতিটি সরকারের আমলেই যারা ব্যাংকের পরিচালক হন তাদের যোগ্যতা হলো, তারা ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক সরকারি ব্যাংক বাঁচানোর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল যাদের হাতে, সেই পরিচালকরাই এখন লুটে খাচ্ছেন ব্যাংকের হাড়-অস্থিমজ্জাটুকুও
অর্থমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন, ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদে দলীয় বিবেচনায় লোক নিয়োগ করা ঠিক হয়নি তিনিই আবার একইসাথে বলছেন, সরকারি যে ব্যাংক লোকসান দিবে সেটা ব্যক্তিখাতে ছেড়ে দেয়া হবে  বাহ! কি চমৎকার! (সময় মত মাথায় চুল না কেটে  শেষে কিনা মাথাই কেটে ফেলার পরামর্শ)

রাষ্ট্রয়াত্ব ব্যাংক সম্পর্কে এসব অভিযোগ নতুন নয়, দীর্ঘদিন থেকেই অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে হলমার্কের মতো ভয়াবহ কেলেঙ্কারির পরও ব্যাপারে সরকারের টনক নড়েনি উল্টো অর্থমন্ত্রী বলেছেন হাজার কোটি টাকা নাকি তেমন কোনো টাকা নয় তিনি দুর্নীতিকে আর অবৈধ মনে করেন না এবং এর গালভরা নাম দিয়েছেন স্পিডমানি ফলে দুর্নীতিও দারুণ স্পিডে চলছে
ব্যাক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ অনেক ক্ষেত্রেই চলছে নিয়ন্ত্রণহীন লুটপাটরাজনৈতিক উপঢৌকনহিসেবে পাইকারিভাবে ব্যাংক খোলায় অনুমতি বিতরণ করা হচ্ছে অনেকে মূলধন ছাড়াই ব্যাংকের মালিক বনে যাচ্ছে ব্যাংকিং সেবা নয়, তাদের উদ্দেশ্য একটিই- জনগণকে প্রতারিত করে বেসুমার লুটপাট করা
ব্যাক টু ব্যাক ভুয়া এলসি (ঋণপত্র) এবং জাল কাগজপত্র বন্ধক (মর্টগেজ) রেখে ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা লুটপাট করছে একটি চক্র ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে এলসির কাগজপত্র তৈরি করে অন্য ব্যাংকে তা বিক্রি করে তুলে নিচ্ছে টাকা তারা সুকৌশলে ব্যাক টু ব্যাক এলসি খুলে নিজেরাই আমদানিরকারক রপ্তানিকারক সেজে ব্যাংকের টাকা লুটে নিচ্ছে ছাড়া ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে তা ব্যাংকে মর্টগেজ রেখে ঋণের আবেদন করছে 
শেয়ার কেলেঙ্কারিতো সারা দেশে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিল সরকার তার কোনো প্রতিকার করেনি ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের সব হারিয়েছে বেশ কয়েকজন আত্মহত্যা করেছে দেশে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন থাকার পরও ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাচার হচ্ছে এখন নতুন দাওয়াই হিসেবে সরকার বেছে নিয়েছেকেন্দ্রীয় ব্যাংক-কে জাতীয় সংসদে জবাবদিহিতার আওতায় আনারবিধান মানুষ রসিকতা করে বলে সরকার ভূত তাড়াবে সরিষা দিয়ে, কিন্তু সরিষার ভূত তাড়াবে কী দিয়ে? কারণ  সংসদে ২২৬ জন সদস্য কোটিপতি তাদের সম্পদ সম্পদের উৎস নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিস্তর ২০০৮ ২০১৪ এর নির্বাচনী হলফনামায় সম্পদ বৃদ্ধির তথ্য যা প্রকাশিত হয়েছে তা তো আলাদিনের চেরাগকেও হার মানিয়েছে এদিকে অবশ্য দুদক এদের ডেকে ডেকে দুর্নীতি মুক্তির সার্টিফিকেট দিয়ে দিচ্ছেন 
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিয়ার রহমান  দেশের টাকা পাচারের এক উদ্বেগজনক তথ্য দিয়েছিলেন

২০১১ সালে বাংলাদেশ থেকে ১১৭ কোটি ডলার অর্থাৎ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা পাচার হয়েছে যা অর্থবছরের রাজস্ব আয়ের ১১ শতাংশ এবং বৈদিশিক উন্নয়ন সহায়তার ৭৮. শতাংশ ২০১২ সালে পাচার হয়েছে ১৮০ কোটি ডলার, প্রায় ১৪ হাজার ৪০ কোটি টাকা, যা বৈদেশিক সাহায্যের চেয়েও বেশি সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় প্রতিবেদনে বলা হয় বাংলাদেশের নাগরিকদের সে দেশের ব্যাংকগুলোতে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৭ কোটি ২০ লাখ ফ্রা আমানত হিসেবে জমা রাখা আছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় হাজার ২৩৬ কোটি টাকা ২০১২ সালের ডিসেম্বরে এর পরিমাণ ছিল হাজার ৯৫০ কোটি টাকা এক বছরের ব্যবধানে আমানতের পরিমাণ বেড়েছে হাজার ২৮৬ কোটি টাকা 

গত বছর জুলাই দৈনিক জনকণ্ঠের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০০২ সাল পর্যন্ত এক দশকে বাংলাদেশ থেকে অন্তত, হাজার ৬০৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার বা লাখ ২৮ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা অবৈধভাবে দেশের বাইরে চলে গেছে

ইউএনডিপি প্রতিবেদনে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ৮০ কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয় এভাবে স্বাধীনতার পর ৪২ বছরে লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে 

টাকায় গড়ে উঠেছে কানাডায় বিশেষ পাড়া, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম, সুইস ব্যাংক, ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন শহরে বিলাসবহুল বাড়ি-এপার্টমেন্ট নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলে-মেয়ে পড়ানো, শপিং করা, চিকিৎসা ইত্যাদির জন্য দেদার খরচ হচ্ছে টাকামালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোমপ্রকল্পে বাংলাদেশি টাকায় কোটি ১৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে যে কোনো বাংলাদেশি পাচ্ছেন ১০ বছর মেয়াদী মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা মালয়েশিয়ার পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী ২০০২ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে হাজার ৭৫৫ জন বাংলাদেশি
বিআরটিএ- তথ্য অনুযায়ী দেশে ৪৯ হাজার বিলাসবহুল গাড়ির নিবন্ধন আছে এর মধ্যে প্রায় ২৫ হাজারেরও বেশি মার্সিডিজ বেঞ্জ লেক্সাস এর এক একটির খরচ পড়ে আমদানি শুল্কসহ কোটি টাকা আর বিএমডাব্লিউ ল্যান্ড রোভার কিনতে খরচ পরে সাত কোটি টাকা পর্যন্ত রিহ্যাব এর তথ্য অনুযায়ী ধানমন্ডিতে ফ্লাটের মূল্য প্রতি বর্গফুট ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা, গুলশানে ২০ থেকে ২৮ হাজার, বারিধারা ২০-২৫ হাজার এবং বনানীতে ১৫-২২ হাজার টাকা যদি সর্বনিম্ন দাম প্রতি বর্গফুট ১৫ হাজার টাকা ধরা হয় তাহলেও মাঝারি মানের ১৫০০ বর্গফুটের একটি ফ্লাটের দাম পড়ে সোয়া দুই কোটি টাকা এসব গাড়ি বাড়ির মালিক কারা?
এখন চলছে সব মেগা প্রকল্পের জয় জয়কার চোখ ধাঁধানো সব প্রকল্প শেষ করার পর চোখ খুলে দেখা যাচ্ছে কী ভয়ঙ্কর লুটপাট হয়েছে এসব ক্ষেত্রে এর একটি নজির গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার ফ্লাইওভার নির্মাণের ব্যয়ের ক্ষেত্রে অন্যান্য সব দেশের শীর্ষে অবস্থান করছে বাংলাদেশ মুম্বাইয়ে ১৬. কিলোমিটার দীর্ঘ ইস্টার্ন ফ্রি ওয়ে নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হয়েছে ৮৮ কোটি টাকা কলকাতায় পরমা পার্ক সার্কাস ফ্লাই ওভারে প্রতি কিলোমিটারে খরচ পড়েছে ৪৮ কোটি টাকা বাটানগর ফ্লাই ওভারের প্রতি কিলোমিটারে খরচ হয়েছে ৪৪ কোটি টাকা ২৪ এপ্রিল১৩ মালয়েশিয়ায় ৫টি ১০. কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাই ওভার নির্মাণ করতে প্রতি কিলোমিটারে খরচ পড়েছে ৫৭ কোটি টাকা চীনে ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড রোড নির্মাণে খরচ পড়েছে প্রতি কিলোমিটারে ৪৮ কোটি টাকা আর যাত্রাবাড়ী ফ্লাই ওভার নির্মাণে খরচ পড়েছে প্রতি কিলোমিটারে ২৪১ কোটি টাকা অথচ নির্মাণ শ্রমিকদের মজুরি বাংলাদেশে সবচেয়ে কম এভাবে ফ্লাই ওভারের নামে টাকা ফ্লাই করে চলে গেল টোলের মাধ্যমে জনগণকে এর খেসারত দিতে হচ্ছে ছাড়া গ্যাস বিদ্যুৎ খাতেও লুটপাট চলছে সেসব ক্ষেত্রেও জনগণকেই দায় নিতে হচ্ছে 
কৃষক-শ্রমিকের উৎপাদন আর প্রবাসীদের পাঠানো আয়ের টাকা এভাবে লুট আর পাচার হয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত  

 সংকলনে : এস এম কামাল হোসেন।

No comments