Tuesday, September 26, 2017

মুক্তি যুদ্ধের চেতনা

                                                                      মুক্তি যুদ্ধের চেতনা :

                                                                                               ------এস এম কামাল হোসেন
আমরা আজ একটা আজব,উদ্ভট জাতিতে পরিণত হতে যাচ্ছি। আজ আমাদেরকে নতুন মুক্তি যুদ্ধের চেতনার ছবক দিচ্ছে কতিপয় জ্ঞানপাপী, রাজনৈতিক উচ্ছিষ্ট ভোগী ,কুলাঙ্গর রা। যারা ১৯৭১ এ জাতির মহান মুক্তি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি। যদিও তাদের সে সময় বয়স হয়েছিল মহান মুক্তি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার । আজ তারা ১৬ কোটি মানুষ কে একটা অন্ধকার গলিতে ধাবিত করছে । আজ তারা নানাবিধ কল্প কাহিনী বলে কিশোর ,যুবক কে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে ।মণগড়া মুক্তি যুদ্ধের চেতনা বলে তারা মুখে ফেনা তুলে তাদের নিজস্ব স্বার্থ চরিতার্থ করছে । আর এ গুলো তারা করছে সরকারের উপর বন্ধুকের নল রেখে। এরা খুবই সুযোগ সন্ধানী ।সরকার তথা দলের দূর্দিনে এদের চিটাফোঁটা ও উপকারে আসেনা । সবকিছু সরকার তথা দলকেই সামাল দিতে হয় । তদুপরি এরা সরকারের উপর মুলা ঝুলিয়ে পাঁকা কলা খাচ্ছে আর দেশের মানুষকে কাচঁ কলা দেখাচ্ছে । এরা আজ জাতিকে দুভাগে বিভক্ত করছে যা একটা উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়নের জন্য মারাত্মক হুমকি। এরা আজ জাতিকে বিভক্তি করছে একদিকে মুক্তিযিুদ্ধের চেতনা অপরদিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী আখ্যা দিয়ে । শুধু এই পর্যন্তই খ্যান্ত হয় নি এরা । ৯০% মুসলামনদের দেশে এরা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় চেতনাকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী বলে আখ্যা দিচ্ছে ! আর অপর পক্ষে ধর্ম বিদ্বেষী, কুপমন্ডুক, লম্পট ,নাপাকী দের আজ আখ্যা দিচ্ছে মুক্তি যুদ্ধের পক্ষের বলে । বড়ই উদ্ভট এদেশে এসব চেতনাবাজদের ফতোয়া ! এদেরকে এদেশের কতিপয় মিডিয়া লালন, পালন ও তোষণ করছে । যা খুবই নিন্দনীয় ও গর্হিত কাজ বলে সংখ্যাগরিষ্ঠদের মনে হচ্ছে ।
মহান মুক্তি যুদ্ধের প্রধান সংগঠক,খলিফা তথা জীবন্ত কিংবদন্তী বলে জাতি যাদের কে চিনেন যেমন: আ স ম আব্দুর রব, শাহজাহান সিরাজ, নূরে আলম সিদ্দিকী, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, কাজী ফিরোজ রশিদ সহ কর্নেল অলি এরকম শত শত মুক্তি যোদ্ধা ও নেতাদের কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের কী ছিল পটভুমি, কি –বা প্রেক্ষাপট,কি রকম দেশ আমরা চেয়েছিলাম মুক্তি যুদ্ধের প্রাক্কালে কিংবা পরে তা আমাদের তরুন প্রজন্ম সরাসরি শুনছে না কিংবা শুনতে পারছে না । আজ হীন স্বার্থবাধী মিডিয়া মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের পাশ কাটিয়ে উদ্ভট চেতনাবাজদের টেনে এনে আমাদের কানকে আজ জ্বালা পালা করছে । আজ আমরা মুক্তি যুদ্ধের চেতনা ছবক শুনছি কোথাকার মুনতাসির মামুন, শা. কবির, মু.জাফর ইকবাল, সুলতানা কামাল, খুশি কবির,ইমরান এইচ সরকার, মুন্নি সাহা, প্রনব সাহা গং দের কাছ থেকে । ঘুরে ফিরে কয়েকটি মিডিয়ায় দিন, মাস,বছরের পর বছর এরা আজ জাতির কাছে মুক্তি যুদ্ধের মণগড়া চেতনা সেল করছে । মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে প্রতিনিয়ত এরা আঘাত হানছে । ঐতিহাসিক ৬ দফা কিংবা ১১ দফার কোনো দফায় মুসলমান, ইসলাম বিরোধী একটি শব্দ নেই । ইসলাম নিয়ে ও একটি শব্দ নেই । মুক্তি যুদ্ধের মুল চেতনা ছিল এই ৬ দফা কিংবা ১১ দফাই ।অথচ এরা দিনের পর দিন, মাসের পর মাস ইসলাম বিদ্বেষী কথা বলে যাচ্ছে মুক্তি যুদ্ধের চেতনা বলে । আর খোদ সরকার এদের মুখ ভেঙ্ছির তামাশা দেখছে । আশা করছি সরকার তার শুভ বুদ্ধির উদয় হবে । এসব চেতনাবোধ সেলকারী দের রুখে দিয়ে সত্যিকারের মুক্তি যোদ্ধা, মুক্তি যুদ্ধের মর্ম কথা শিশু ,কিশোর, যুবার মধ্যে ছড়িয়ে দিবে এই হোক আজকের প্রত্যাশা ।
নতুন প্রজন্মের উদ্দেশ্য ঐতিহাসিক ৬ দফা এবং ১১ দফা নিম্নে উল্লেখ করলাম :
ছয় দফা দাবি-এর দাবিগুলো নিম্নরূপ:
১.প্রথম দফা : সরকারের বৈশিষ্ট হবে Federal বা যৌথরাষ্ট্রীয় ও সংসদীয় পদ্ধতির; তাতে যৌথরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলো থেকে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক সভার নির্বাচন হবে প্রত্যক্ষ এবং সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে। কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক সভার প্রতিনিধি নির্বাচন জনসংখ্যারভিত্তিতে হবে।
২.দ্বিতীয় দফা : কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব থাকবে কেবল প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক বিষয় এবং তৃতীয় দফায় ব্যবস্থিত শর্তসাপেক্ষ বিষয়।
৩•তৃতীয় দফা : পুর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য দুটি পৃথক মুদ্রা-ব্যবস্থা চালু করতে হবে, যা পারস্পরিকভাবে কিংবা অবাধে উভয় অঞ্চলে বিনিময় করা চলবে। অথবা এর বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে একটি মুদ্রা-ব্যবস্থা চালু থাকতে পারে এই শর্তে যে, একটি কেন্দ্রীয় সংরক্ষণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যার অধীনে দুই অঞ্চলে দুটি রিজার্ভ ব্যাংক থাকবে। তাতে এমন বিধান থাকতে হবে যেন এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে সম্পদ হস্তান্তর কিংবা মূলধন পাচার হতে না পারে।
৪•চতুর্থ দফা : রাজস্ব ধার্য ও আদায়ের ক্ষমতা থাকবে অঙ্গরাজ্যগুলোর হাতে। প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক বিষয়ের ব্যয় নির্বাহের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রয়োজনীয় রাজস্বের যোগান দেয়া হবে। সংবিধানে নির্দেশিত বিধানের বলে রাজস্বের এই নির্ধারিত অংশ স্বাভাবিকভাবেই কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে জমা হয়ে যাবে। এহেন সাংবিধানিক বিধানে এমন নিশ্চয়তা থাকবে যে, কেন্দ্রীয় সরকারের রাজস্বের প্রয়োজন মেটানোর ব্যাপারটি এমন একটি লক্ষ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে যেন রাজস্বনীতির উপর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নিশ্চিতভাবে অঙ্গরাজ্যগুলোর হাতে থাকে।
৫•পঞ্চম দফা : যৌথরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্য যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করবে, সেই অঙ্গরাজ্যের সরকার যাতে স্বীয় নিয়ণ্ত্রনাধীনে তার পৃথক হিসাব রাখতে পারে, সংবিধানে সেরূপ বিধান থাকতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হবে, সংবিধান নির্দেশিত বিধি অনুযায়ী নির্ধারিত অনুপাতের ভিত্তিতে অঙ্গরাজ্যগুলো থেকে তা আদায় করা হবে। সংবিধান নির্দেশিত বিধানানুযায়ী দেশের বৈদেশিক নীতির কাঠামোর মধ্যে, যার দায়িত্ব থাকবে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে, বৈদেশিক বাণিজ্য ও বৈদেশিক সাহায্য সম্পর্কে চুক্তি সম্পাদনের ক্ষমতা আঞ্চলিক বা প্রাদেশিক সরকারগুলোর হাতে থাকবে।
৬•ষষ্ঠ দফা : ফলপ্রসূভাবে জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার কাজে সাহায্যের জন্য অঙ্গরাজ্যগুলোকে মিলিশিয়া বা আধা-সামরিক বাহিনী গঠনের ক্ষমতা দিতে হবে।
ঐতিহাসিক ১১ দফা :
১৯৬৯ সালে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে পূর্ব পাকিস্তানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ প্রবল রূপ ধারণ করে। ১৯৬৯ সালের ৪ই জানুয়ারি সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তাদের ঐতিহাসিক ১১ দফা কর্মসূচী পেশ করেন।
১ শিক্ষা সমস্যার আশু সমাধান।
২.প্রাপ্তবয়স্ক ভোটে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা,
৩.পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন।
৪.পশ্চিম পাকিস্তানের সকল প্রদেশগুলোকে স্বায়ত্তশাসন দিয়ে একটি ফেডারেল সরকার গঠন।
৫.ব্যাংক, বীমা, পাটকলসহ সকল বৃহৎ শিল্প জাতীয়করণ।
৬.কৃষকদের উপর থেকে কর ও খাজনা হ্রাস এবং পাটের সর্বনিম্নমূল্য ধার্য করা।
৭.শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি, চিকিৎসা, শিক্ষা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা এবং শ্রমিক আন্দোলনে অধিকার দান।
৮. পূর্ব পাকিস্তানের বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও জল সম্পদের সার্বিক ব্যবহারের ব্যবস্থা গ্রহণ।
৯. নিরাপত্তা আইন এবং অন্যান্য নির্যাতনমূলক আইন প্রত্যাহার।
১০. সিয়াটো (SEATO), সেন্ট্রো (CENTRO)-সহ সকল পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি বাতিল এবং জোট বহির্ভূত নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ।
১১. আগরতলা মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিসহ দেশের বিভিন্ন কারাগারে আটক ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক ও রাজনৈতিক কর্মীদের মুক্তি ও অন্যান্যদের উপর থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহার ।
রচনা ও সংকলনে
===== এস এম কামাল হোসেন ।


No comments:

Post a Comment

A BROKEN DREAM- chapter -one

A BROKEN DREAM Status of Rule of Law, Human Rights and Democracy Justice Surendra Kumar Sinha Chief Justice (Rtd.), Supreme Court ...