“ তন্ত্র , মন্ত্র ও গণতন্ত্র”
====================
-- এস এম কামাল হোসেন ====================
আমার শৈশব কেটেছে একে বারে অজোপাড়া গ্রামে।মেঠো পথ।খাল-বিল নদী-নালা ঝোঁপ-ঝাড় মাটি-পানির সাথে আমার জীবনের গল্পটা শুরু।সেখানের ছিল নানা রকম সংমিশ্রিত কিষ্টি কালচারে ভরপুর।তার কোনটা খাঁটী সরলপনা আবার তার কোনটা কুসংস্কারে ভরপুর ছিল।পাঠক ধৈর্য্য হারাবেন না ,আমি আমার বায়োগ্রাফি লিখব না; কারণ আমি এমন বিখ্যাত বা কুখ্যাত হয়নি যে আমার বায়োগ্রাফি আপনি ধৈর্য্য ধরে পড়বেন এ বোধ টুকু অন্তত আমার আছে।তাই শুধু ভুমিকার অবতারণা করছিলাম এই যা।মূল কথায় আসি,বয়স তখন আমার বয়স কত হবে?বড় জোড় ৭ কিংবা ৮।তখন থেকেই কানে বাজতে লাগলো বাড়ী কিংবা প্রতিবেশী চাচী,দাদীর তন্ত্র-মন্ত্র গুরু দের ভবিষ্যৎ বাণী কিংবা তাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার ব্যবস্থাপনা সন্মন্ধে নানাবিদ আলোচনা।তাদের ভাষায় এর নাম গণক ঠাকুর কিংবা গণক বাবা। রুপ কথার কালপনিক এক চরিত্রের মত এই গণক বাবা। প্রায়ই চাচী,দাদীরা বলতো গণক বাবা এই রকমই পরিণতির কথা বলছিল আমাকে/তোমাকে কিন্তু তুমি/আমি পাত্তা দেওনি/দেইনি ইত্যাদি ইত্যাদি। এদের এই সব কথোপকথন শুনে আমি ভিতর ভিতের ভীষণ কৌতুহলী উঠছিলাম এই অলৌকক বাবা দেখার জন্য।আমার শিশু সরল মনে একটা সরল বিশ্বাস ও জন্মেছিল এই গণক বাবা সর্ম্পকে।কিন্তু বড় হয়ে আমি সেই আমার শিশু বিশ্বাসের বাবার সাক্ষাত পায়নি ।যা পেয়েছি তা হলো ভন্ডামি,লুচ্চামি গোড়ামী,শঠামী এবং ঠকামী।এরা তন্ত্র বাজ, ভন্ডের রাজ।এদের তন্ত্র হলো কথা বলার কথার মন্ত্র।মন্ত্র মুগ্ধের মাধ্যমে অর্থলাভ করাই এদের অন্তরের অন্তহীন উদ্দেশ্য।বয়স এবার ৩০। সন ২০০৬।কৈশোর পেড়িয়ে যৌবনে পদার্পণ। জন্ম আমার একটা উন্নয়নশীল দেশে। যেখানে আছে অনেক সমস্যা।তাই এবার আবির্ভাব একগুচ্ছ তান্ত্রিকের। শুরু হলো তান্ত্রিক এর কান ঝালাপালা করা তন্ত্রবাজী ।পাড়া প্রতিবেশী,ভাই, বোন ,বন্ধু-বান্ধবের জোড় সোড়গোল টিভি পেপার পত্রিকা মিডিয়ায় তার প্রচার ও প্রসার।“এখনই সময় ..........” এখনই সময় .......... এই বিজ্ঞাপনে গোটা দেশ সয়লাব ।সেই সাথে ভাগ্য বদলের নানাবিধ প্যাকেজ প্রোগ্রাম।বিরোধেী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার,১০ টাকায় সের চাল, ঘরে ঘরে চাকুরী, ডিজিটে ডিজিটে উন্নয়ন, সুষম অধিকার,সঠিক মাত্রায় গণতন্ত্র,উন্নয়নের সুনামী,দূনীতি, স্বজনপ্রীতি করবো না কোনো কিছুই যদি গদিটা হয় আমারি ইত্যাদি ইত্যাদি......।সেই সাথে এক দিকে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের চরিত্র হরণের একদল সুদক্ষ সার্জন দ্বারা একটি পক্ষকে সার্জিকাল বিছানায় রেখে লেভেল প্লেয়েই ফিল্ড তৈরি করে(!) বিশেষ ব্যবস্থায়, বিশেষ সময় খেলার আয়োজকের আয়োজনে এক দল দক্ষ তান্ত্রিকের তন্ত্র মন্ত্রে মুগ্ধ হয়ে গোটা দেশ বাসীর মত আমি ও খুশিতে, আহ্লাদে মুগ্ধ হয়েছিলাম সেদিন সরল বিশ্বাসে।যে রকম আমার সরল বিশ্বাস জন্মে ছিল শৈশবে গণক বাবার প্রতি ।উন্নয়নের দশ বছর পেরিয়ে ইউ পি নির্বাচনে ভোট দিয়ে গিয়ে সেদিন দেখি আমার ভোটটা দেওয়া হয়ে গেছে যখনি ঘড়ির কাঁটাটা বাজে মনে হয় ৬ কিংবা ৭ তখনি!হায়রে গণতন্ত্র!!গত ১০ বছরে বেশ কয়েক বার ভোট নিয়েছি। এর কিছু নির্বাচনে ভোটের ব্যালট পেপার ভোটারের হাতে দিতে পেরেছি আর বেশির ভাগই পারিনি।এতে ভোটারের মনের অবস্থা উপলব্ধি করনি।কিন্তু সেদিন নিজে যখন ভোটটা দিতে পারিনি তখন বুঝেছি এর কত ব্যথা, কত জ্বালা, সারা রাত ঘুমাতে পারিনি ।নিজেকে ছিড়ে ফিলতে ইচ্ছে করছিল।বার বার নিজের পৌরষত্বকে নিজে তিরস্কার করছিলাম।মনকে তবুও সামলাতে পারতাম যদি আমার বিষয়টা একটা বিছিন্ন ঘটনা হতো।কিন্তু এটাই এখন যে এদেশের বাস্তবতায় রুপ নিয়েছে বা নিতে যাচ্ছে।সেই সাথে তিরস্কার করছিলাম কিংবা এখন করছি -------------- । হায়রে গণতন্ত্র!বিচিত্র এই দেশ!বিচিত্র তার গণতন্ত্র! বিচিত্র তার উন্নয়ন!!
( তারিখঃ ১২/১/২০১৭)

No comments:
Post a Comment