Header Ads

Bangladesh Is a .....

                                             “লড়ে যাচ্ছেন মমতা হেরে যাচ্ছেন হাসিনা ”
                                                                           --------এস এম কামাল হোসেন

গত ১৬-১৭ জানুয়ারী এই ভারতের পশ্চিম বঙ্গের কলকাতার নিউটাউনে- বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন ( Bengal Global Business Summit) সম্প্রতি শেষ হয়েছে আর বাংলাদেশের ঢাকায় ১ জানুয়ারী শুরু হয়ে চলমান আছে আর্ন্তজাতিক বানিজ্য মেলা। ঢাকার “আর্ন্তজাতিক বানিজ্য মেলা” র উদ্ভোধন করেন সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর ভারতের পশ্চিম বাংলার ৪র্থ “বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন” উদ্ভোধন করেন সেখান কার সি.এম মমতা ব্যানার্জী। উক্ত দু’টি স্রিমনির পার্থক্য শুধু শেষ দু’টি শব্দে। শব্দ দু’টি হলো-“সম্মেলন”ও “মেলা”।
সামিটে ভারতের পশ্চিম বঙ্গের সি.এম মমতা ব্যানার্জি তাঁর রাজ্যে তার সরকার বিগত ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর কী কী উন্নয়ন করেছে সেগুলো তিনি তার উদ্ভোধনী ভাষণে তুলে ধরেন। সেই সাথে তার রাজ্য লগ্নি টানতে বিভিন্ন লগ্নি কারীদের স্পষ্ট করে বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন কেন তার রাজ্যে শিল্প পতিরা বিনিয়োগ করবেন।তাঁর দাবী তাদের আছে-
 রাজ্যের ল্যাণ্ড ব্যাংকে প্রচুর জমি রয়েছে।ফলে বিনোয়োগকারীদের জন্য জমির কোন অভাব নেই।
 স্থায়ী সরকার ও স্বচ্ছ প্রশাসন।
 রাজনৈতিক স্থিতিশিলতা ও স্থায়ীত্ব।
 উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্খা।
 পর্যাপ্ত বিদ্যুত।
 ই টেন্ডার ও ই গর্ভনেস।
 শিল্পের জন্য আবেদনের ২৪ ঘন্টার মধ্যে ছাড়পত্র।
 পর্যাপ্ত কাঁচামাল ও মানব সম্পদ ইত্যাদি ।
সম্মেলন উপলক্ষে চালু করেছেন অ্যাপ। যার মাধ্যমে উৎসাহী সকলে সম্মেলন সর্ম্পকে জানতে পারেন খুব সহজেই।ভারতের নামকরা বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার সহ এ সম্মেলনে - পোল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, জাপান, ফ্রান্স, থাইল্যান্ড ও গ্রেট ব্রিটেন সহ ৩০ টি দেশ অংশগ্রহণ করেছে। এ দেশগুলো থেকে তিন’শত বাণিজ্য প্রতিনিধি দল কলকাতায় এসেছিল। মমতার দাবী তাঁর রাজ্য সরকার পশ্চিম বঙ্গকে ভারতের নাম্বার চার রাজ্যে উন্নিত করেছেন।বাংলাকে “বেস্ট বেঙ্গলে”পরিণত করেছেন। এছাড়াও তাঁর দাবী “বেঙ্গল মিনস বিজনেস”।
এ সম্মেলনে ভাষণ দেন আম্বানি গোষ্ঠীর মুকেশ আম্বানি। তাঁর দাবী তিনি গত দুই বছরে পশ্চিমবঙ্গে ১৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। স্পাইস জেট কোম্পানির চেয়ারম্যান অজয় সিং,জেএস ডাবলু স্টিলের কর্ণধার সজ্জন জিন্দাল। তিনি অবশ্য ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে বিনিয়োগ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।বক্তব্য দেন শিল্পপতি লক্ষ্মী মিত্তাল,শিল্পপতি সঞ্জীব গোয়েঙ্কা সহ অনেকে। এছাড়া বিদেশী ডেলিগেটদের মধ্যে পোল্যান্ডের ডেপুটি মিনিস্টার ডেরেক বোগারস্কি সহ দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান,থাইল্যান্ড সহ বিভিন্ন দেশের বাণিজ্য দলের এক প্রতিনিধিরা। উল্লেখ্য যে, ভারতের সবচেয়ে কাছের এবং সর্বোত্তম পর্যায়ের বন্ধু রাষ্ট্র বাংলাদেশ এ সম্মেলনে যোগ দেয়নি।
শুধু অবকোঠামোগত উন্নয়ন নয় মেলায় মমতা তার রাজ্যে প্রশাসনিক উন্নয়নকে তার মেলায় তুলে ধরেছেন। তিনি দাবী করেছেন অন্য রাজ্যে থেকে অফিসাররা এসে শিখে যাচ্ছেন কীভাবে প্রশাসন চালাতে হয়। তাঁর আমলে রাজ্যের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির হার সমস্ত রাজ্যের চেয়ে এগিয়ে। রাজ্যে ক্যাপিটাল এক্সপেনডিচারের হার ৭.৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে,ইস্পাত ও ক্ষুদ্র শিল্পে রাজ্য এক নম্বরে রয়েছে। মমতার আরও দাবি, গত ছয় বছরে তিনি ৮১ লাখ বেকার যুবককে চাকরি দিয়েছেন। এছাড়া গ্রামীণ কর্মবিকাশের লক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গ এক নম্বরে রয়েছে।
গত বছর এ বিশ্ব বাণিজ্য সম্মেলনে মমতা ঘোষণা করেছিল ২ লাখ ৪৩ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আসছে।আর তাঁর ঘোর বিরোধীদের দাবী বাস্তবে নাকি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ১৭ হাজার কোটি টাকার আর প্রকৃত বিনিয়োগ হয়েছিল মাত্র ৬০০ কোটি টাকা।
আজকে আমি মূলত একটি বিষয় উল্লেখ করার জন্যই এসব তুলে ধরা। বিষয়টা হলো আমার যতদূর মনে পড়ে বর্তমান সরকার ক্ষমতা আসীন হওয়ার ১ম মেয়াদে বিদেশের মাটিতে কোটি কোটি মার্কিন ডলার খরচ করে বিদেশী বিনিয়োগ দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য একটি শো ডাউন করেছিল । তখন সরকারের মন্ত্রীরা খুব গলাবাজী করছিল যে আমরাই পারি, আমাদের দ্বারাই সম্ভব বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা আর তাদের থেকে বিনিয়োগ এনে দেশে শিল্প বিল্পব ঘটিয়ে দেশে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। সরকারের কোটি কোটি ডলারের বিনিয়োগ বিজ্ঞাপন টাইটানিক জাহাজের মত সুপার ফ্লপ হয়েছিল। অর্থ্যাৎ তা দ্বারা ১ ডলার ও বিদেশী বিনিয়োগ হয়েছিল বলে আমার তথা দেশবাসীর জানা নেই। আজ দেশে বিদেশী বিনিয়োগ শূণ্যের কোঠায়। দেশে আজ কোটি কোটি শিক্ষিত বেকার।এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে দেশে আজ শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ৪ কোটি ৬৬ লক্ষ। ঘরে ঘরে চাকুরী দিবেন বলে সরকার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা আজ দেশবাসীর কাছে স্বর্গীয় অলীক বস্তুর মত গেছে। অথচ ভারতের পশ্চিম বঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি উদ্ভাবন করেছেন এক অভিনব দেশীয় উপায়।নিজ দেশের মাটিতে ৪র্থ বারের মত আয়োজন সেরে ফেলেছেন “বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন” আর তাতে সাড়া পাচ্ছেন তার দেশী বিদেশী বিনিয়োগকারীর|মমতা লড়ে যাচ্ছেন তার রাজ্যের জন্য, দেশের জন্য আর কাঙ্খিত সফলতাও পাচ্ছেন। তার প্রশাসনিক সংস্কার সত্যিই মিরাক্কেল।আর মিরাক্কেল বলেই দ্বিতীয় মেয়াদে রাজ্যে জনতাই তাকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছে, কোনো প্রভু কিংবা কোন সংবিধানের নিদিষ্ট পৃষ্ঠা নয়। রোটিন মাফিক রাজ্যের সসস্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক বডিকে পালাক্রমে পাবলিক লি ডাকছেন আর তাদের থেকে জবাব নিচ্ছেন। আর তাতে বাদ যাচ্ছেন না শিক্ষক, ডাক্তার, পুলিশ,স্থানীয়প্রশাসনের কেউই। দোষী ও অদক্ষকে জনতার সামনেই তিরস্কার বা গালাগাল করছেন। নাম তার মমতা হলেও অন্যায়ের সাথে কোন মমতাই দেখছি না বরং দেখছি কঠোরতা।
এবার যদি ভারতের মমতার পশ্চিমবাংলার “বিশ্ববঙ্গ বানিজ্য সম্মেলন” এর সাথে আমাদের দেশে মাস ব্যাপী চলমান “ঢাকা আর্ন্তজাতিক বানিজ্য” মেলার সাথে মিলাই তা হলে কী পার্থক্য দেখতে পাই? আমাদের আর্ন্তজাতিক বানিজ্য মেলা হলো দেশীয় ক্রেতার মাঝে বিদেশী পণ্য সহ দেশী পণ্যর মুড়ি মুড়কি বিক্রয় মেলা। এটির নাম কোন “আর্ন্তজাতিক বানিজ্য মেলা” হতেই পারে না। কারণ এখানে বিদেশী পণ্য আছে বাট বিদেশী ক্রেতা নেই।কেবল বেদেশী পণ্যে থাকলেই কী সেটা আর্ন্তজাতিক হয়ে যায়? অথচ সরকার এখান থেকে হোক কিংবা এখান থেকে বেড়িয়ে সত্যিকারে “আর্ন্তজার্তিক বানিজ্য সম্মেলন” আয়োজন করতে পারে হোক সেটা মমতার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে। ভালো কাজে অনুসরণে কোন ক্ষতি নেই বরং লাভ হবার সম্ভাবনা বেশী। আর তাতে দল তথা সরকারের জন্য ভোটারের কাছ থেকে ভোট আসার একটা উপলক্ষ হতে পারে;যা নিদিষ্ট বইয়ের নিদিষ্ট পাতা কোন দল তথা সরকারকে দিতে পারে না।
তারিখ:২২/১/২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ

No comments