ফরাক্কা আজ মরণ ফাাঁদ !
ভারতের সাথে
বাংলাদেশের প্রথম
পানিবিরোধ শুরু
হয় ফারাক্কা
বাঁধ বা
ফারাক্কা ব্যারাজ
নিয়ে।
কলকাতা বন্দরকে
পলিমুক্ত রাখার
লক্ষ্যে ভারত
সরকার গঙ্গা
নদীর ওপর
ফারাক্কা বাঁধ
নির্মাণ করে। পশ্চিম
বাংলার মুর্শিদাবাদ
জেলার অন্তর্গত
রাজমহল ও
ভগবানগোলার মধ্যবর্তী
স্থানে ফারাক্কা
বাঁধ অবস্থিত। ১৯৫৬
সালে ২.২৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ
এই বাঁধ
নির্মাণের কাজ
শুরু হয়
এবং ১৯৬৯
সালে শেষ
হয়।
এই বাঁধের
উদ্দেশ্য হচ্ছে,
ভাগীরথী নদী
দিয়ে ৪০,০০০ কিউসেক পানি
প্রত্যাহারের মাধ্যমে
কলকাতা বন্দরকে
সচল রাখা।
ভারত কর্তৃক
ফারাক্কায় এক
তরফা পানি
প্রত্যাহারের ফলে
বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি,
কৃষি, লবণাক্ততা,
নৌপরিবহণ, মৎস
সম্পদ ইত্যাদি
বিভিন্ন ক্ষেত্রে
এর বিরূপ
প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য
করা গেছে। ফলে
দেশের অর্থনীতি
দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ
হয়েছে।
ভারত সরকার
শুকনা মৌসুমে
ফারাক্কার উজানে
পানি প্রত্যাহার
করে।
ফলে ফারাক্কার
ভাটিতে বাংলাদেশ
অংশে গঙ্গা
নদীতে পানি
প্রবাহ হ্রাস
পায় এবং
ভূগর্ভস্থ পানি
সমতল মাত্রা
নিচে নেমে
যায়।
পরিণতিতে নদীর
তলদেশ ভরাট
হয়ে যায়। এর
ফলে নদীর
ধারণ ক্ষমতা
হ্রাস পায়। বর্ষা
মৌসুমে বাঁধের
নিয়ন্ত্রক গেট
খুলে দেয়া
হয়।
সে সময়ে
তীব্র বেগে
ধেয়ে আসা
পানি বাংলাদেশে
বন্যা ঘটায়।
ফারাক্কা ব্যারাজের
পানি সংকট
সমাধানের উদ্দেশ্যে
আলোচনার জন্য
১৯৬০ সালে
তদানীন্তন পাকিস্তান
সরকার এবং
ভারত সরকারের
বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের
এক বৈঠক
অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ স্বাধীনতা
লাভের পর
১৯৭২ সালে
ভারত ও
বাংলাদেশের পানি
বিশেষজ্ঞ নিয়ে
যৌথ নদী
কমিশন গঠিত
হয়।
এই কমিশনের
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী
শুকনা মৌসুমে
ভারতের অংশে
ফারাক্কা ব্যারাজের
ভাটিতে এবং
বাংলাদেশ অংশে
হার্ডিঞ্জ ব্রীজের
ভাটিতে যৌথভাবে
পানি প্রবাহ
এবং সংশ্লিষ্ট
তথ্যাদি সংগ্রহ
করা হয়। সংগৃহীত
তথ্যাদি উভয়
দেশের মাঝে
নিয়মিত বিনিময়
করা হয়। কমিশনের
দীর্ঘ বৈঠকের
পরেও বাংলাদেশ
তার পানির
ন্যায্য হিস্যা
হতে বঞ্চিত
হয়।
১৯৭৪ সালের
১৬ মে
তারিখে বাংলাদেশের
তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী
শেখ মুজিবুর
রহমান এবং
ভারতের তদানীন্তন
প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা
গান্ধী ফারাক্কা
পয়েন্টে গঙ্গার
পানি বন্টন
বিষয়ে এক
যৌথ বিবৃতি
দেন।
এই যৌথ
বিবৃতি অনুসারে
বাংলাদেশ অন্তর্বর্তী
সময়ের জন্য
শুকনা মৌসুমে
ফারাক্কা পয়েন্টে
(ব্যারাজের ভাটিতে)
৪৪,০০০
কিউসেক পানি
(১ কিউসেক
= প্রতি সেকেন্ডে
প্রবহমান এক
ঘনফুট পানি) পাবে।
১৯৭৫ সালের
৩১ মে
তারিখে এই
চুক্তির মেয়াদ
শেষ হয়।
এরপর বাংলাদেশের
রাষ্ট্রপতি জিয়াউর
রহমান এবং
ভারতের প্রধানমন্ত্রী
মোরারজী দেশাই
গঙ্গার পানি
বন্টন বিষয়ে
১৯৭৭ সালের
৫ নভেম্বর
৫ বছর
মেয়াদি এক
চুক্তি স্বাক্ষর
করেন।
এই চুক্তির
শর্ত অনুযায়ী
বাংলাদেশ শুকনা
মৌসুমে ফারাক্কা
পয়েন্টে ৩৪,
৫০০ কিউসেক
পানি পাবে। ১৯৮২
সালের ৪
নভেম্বর তারিখে
এই চুক্তির
মেয়াদ শেষ
হয়।
তারপর রাষ্ট্রপতি
হুসেইন মুহম্মদ
এরশাদের আমলে
১৯৮২ ও
১৯৮৫ সালে
ভারতের সাথে
দুটি সমঝোতা
স্মারক স্বাক্ষরিত
হয়।
এরপর ১৯৮৯
সাল হতে
১৯৯৬ সাল
পর্যন্ত ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে
গঙ্গা নদীর
পানি বন্টন
বিষয়ে কোনো
চুক্তি হয়
নাই।
অবশেষে ফারাক্কা
পয়েন্টে ১
জানুয়ারি হতে
৩১ মে
সময়কালে ১০
দিন অন্তর
হিসেবে ভারত
ও বাংলাদেশ
কে কী
পরিমাণ পানি
পাবে এই
ভাগ বাটোয়ারার
বিষয়ে ১৯৯৬
সালের ১২
ডিসেম্বর তারিখে
ভারত সরকার
ও বাংলাদেশ
সরকারের মাঝে
৩০ বছর
মেয়াদি গঙ্গা
পানি চুক্তি
সম্পাদিত হয়। এই
চুক্তিতে স্বাক্ষর
করেন বাংলাদেশ
সরকারের পক্ষে
প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা এবং
ভারত সরকারের
পক্ষে প্রধানমন্ত্রী
এইচ ডি
দেবগৌড়া।
চুক্তির শর্ত
অনুসারে ফারাক্কা
পয়েন্টে পানি
প্রবাহ ৭০,০০০ কিউসেক হলে
ভারত ৫০%
এবং বাংলাদেশ
৫০% পাবে। পানিপ্রবাহ
৭০,০০০
হতে ৭৫,০০০ কিউসেক হলে
বাংলাদেশ পাবে
৩৫,০০০
কিউসেক এবং
অবশিষ্ট পাবে
ভারত।
পানিপ্রবাহ ৭৫,০০০ কিউসেক এর
বেশি হলে
ভারত ৪০,০০০ কিউসেক এবং
অবশিষ্ট বাংলাদেশ। এই
চুক্তিটি বর্তমানে
কার্যকরী আছে। ফারাক্কা পয়েন্টে
গঙ্গা নদীর
পানি চুক্তি
ভারত ও
বাংলাদেশের মাঝে
প্রথম এবং
একমাত্র পানি
চুক্তি।
Post a Comment