Wednesday, September 7, 2016

বাংলাদেশ কী মধ্যম আয়ের দেশ না নিম্ন আয়ের দেশ ?

                      বাংলাদেশ কী মধ্যম আয়ের দেশ ?

 জাতিসংঘের বাণিজ্য উন্নয়ন সংস্থার (আংটাড) একটি প্রতিবেদন যার শিরোনামএল ডি সি প্রতিবেদন -২০১৪বিশ্বব্যাপী একযোগে প্রকাশ করা হয়েছিল। প্রকাশিত প্রতিবেদনের  প্রতিপাদ্য বিষয় ছিলকাঠামোগত পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি- ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডা জাতিসংঘের সূত্র মতে তিন বছর পর পর তিনটি সূচক (Indicators) যথাক্রমে মাথাপিছু আয়, মানব সম্পদ উন্নয়ন সূচক অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক এর উপর নির্ভর করে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) নির্ধারণ করা হয়। এখন এল ডি সি থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছতে হলে যে সংখ্যা তাত্ত্বিক বিবেচনা তাতে দেখা যায় যে মাথাপিছু আয় হতে হবে ১১৯০ মার্কিন ডলার, মানব সম্পদ সূচক ৬৬ এবং অর্থনীতির ভঙ্গুরতা সূচক ৩২। এর মধ্যে একটি দেশ যে কোন দুটি সূচক অর্জন করতে পারলেই সেটি এল ডি সি থেকে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করে থাকে। আংকটাডের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৩ সালে বাংলাদেশের অবস্থান হলো মাথাপিছু আয় ৯০০ মার্কিন ডলার, মানব সম্পদ সূচক ৫৪. এবং অর্থনীতির ভঙ্গুরতা সূচক ৩২.৪। প্রথম দুটি সূচকের বাড়তির প্রবণতা এবং তৃতীয় সূচকটির নিম্নমুখী প্রবণতা অর্থনীতির জন্য ভাল

বাংলাদেশ ১৯৭৫ সাল থেকে এল ডি সি-এর তালিকাভুক্ত হয়েছে এবং ২০১২ সালের ইউ এন -এর মানদণ্ডে দেশটি একটি স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) সেই হিসেবে বাংলাদেশ অগ্রাধিকার মূলক বাজার সুবিধা পায় এবং উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে কম সুদে ঋণও পায়। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অবস্থার মূল্যায়ন প্রতি তিন বছর পর পর করা হয় এবং সেই হিসাবে পরবর্তী মূল্যায়ন হবে  ২০১৫ সালে যেখানে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির কোন সম্ভাবনাই নেই। কারণ তিনটি মানদণ্ডের মূল্যায়নে এখনও বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে এবং পরবর্তী ২০১৮ সালে যদি বাংলাদেশকে এল. ডি. সি. থেকে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্তি হতে হয় তা হলে দেশটির মাথাপিছু আয়, মানব সম্পদ অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে যুগান্তকারী অগ্রগতি সাধিত করতে হবে যে কাজটি খুব সহজ বলে প্রতীয়মান হয় না। অপরদিকে বর্তমান সরকারের রূপকল্প-ভিশন ২০২১ উক্ত সময়ে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার যে স্বপ্ন লালন করে চলেছে তা বাস্তবায়ন হবে কি না কেবলই রাজনৈতিক দর্শন হিসেবে থেকে যাবে তা যেন দেখার বিষয়। তবে যেভাবে দেশের অর্থনীতির চলকগুলো এগুচ্ছে যেমন জিডিপি প্রবৃদ্ধি, রপ্তানি, রেমিট্যান্স, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, খাদ্য নিরাপত্তা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, এমডিজি-এর সামাজিক সূচক ইত্যাদি, ধারা অব্যাহত থাকলে উন্নয়ন অনেকাংশে ত্বরান্বিত করা সম্ভব  কিন্তু সন্দেহ একটা থেকেই যায়। বিশেষত রাজনৈতিক অস্থিরতা আমাদের আগামীদের স্বপ্নকে আবার নষ্ট করে দেয়ার সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেয়া যায় না। এখনও বাংলাদেশকে অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হবে বিশেষত প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহারের  ক্ষেত্রে, অর্থনীতিকে বহুমুখীকরণের ক্ষেত্রে এবং অর্থনীতিকে বিশেষায়িত করার ক্ষেত্রে যদি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে হয়। ক্ষেত্রে অর্থনীতির কাঠামোগত পরিবর্তনের বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি যদিও মাথাপিছু আয় বাড়ানোও প্রয়োজন বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ উত্পাদন (জিডিপি) কৃষির অবদান ২০ শতাংশের কম অথচ কর্মসংস্থানের ৫৪. শতাংশ সংগঠিত হয়েছে কৃষিখাতে যাদের উত্পাদনশীলতা কম বিধায় আয়ও কম এবং ছদ্মবেশী বেকারত্ব মাথা গেড়ে বসেছে খাতে।  অপরদিকে শিল্পখাতে কর্মসংস্থান হয়েছে মাত্র ১৩. শতাংশ অথচ এই উত্পাদনশীল খাতটিতে প্রবেশাধিকার না পেয়ে কৃষি খাত থেকে উদ্ধৃত কর্মসংস্থান চলে যাচ্ছে অসংগঠিত সেবা খাতে যাদের উত্পাদনশীলতা স্থায়িত্ব  উভয়টিতে সংকট রয়েছে যা টেকসই প্রবৃদ্ধির কোনভাবেই নিয়ামক নয়। এই বিষয়টিকে নিয়ে সরকারের অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয় যেমন অর্থ, কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য ইত্যাদির গতিশীল ভূমিকা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছে বিশেষত অর্থ সরবরাহকারী সংস্থা সম্পর্কে। অতিসম্প্রতি খোদ অর্থ  মন্ত্রণালয় দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি বিষয়ে সরকারের বিগত মেয়াদের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার সূচকসমূহের সাম্প্রতিক অবস্থা নিয়ে একটি নিরপেক্ষ মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এই অনুশীলনে অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনটি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত  হয়েছে যেমন বেসরকারি বিনিয়োগে শ্লথগতি, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি পশ্চাত্পদ রাজস্ব আদায়ের গতি। অনেকে মনে করেন সরকারের নিজস্ব মূল্যায়ন করা চ্যালেঞ্জগুলো সঠিক তবে আর্থিক খাতের বর্তমান অবস্থা উপেক্ষিত হয়েছে। বাংলাদেশকে এল ডি সি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে অভ্যন্তরীণ উত্পাদন (জিডিসিপি) -১০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন (এডিপি) এর ধীরগতি ব্যয় দক্ষতার মান নিয়ে মন্তব্য রাখা হয়েছে প্রতিবেদনে যা কেবল মাত্র প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত জনবলের দক্ষতা বৃদ্ধি জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে উন্নয়ন সম্ভব।  কিন্তু নিরপেক্ষ গবেষকবৃন্দ মনে করেন যে এল ডি সি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সকল সূচকের অগ্রগতি  কোন শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে নেই এবং সরকারের রাজস্ব আহরণের দুর্বলতার কারণে গত অর্থ বছরে (২০১৩-২০১৪) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৮১ শতাংশ আদায় করা সম্ভব হয়েছে এবং রাজস্ব ঘাটতির প্রভাব সরকারি ব্যয় প্রশাসনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে চলছে। এল ডি সি থেকে বেরিয়ে আসার পথে বড় একটি বাধা হলো সুশাসনের অপর্যাপ্ততা এবং অর্থমন্ত্রীসহ বাংলাদেশ ব্যংকের গভর্ণর স্বীকার করেছেন সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর ঋণ পরিচালনায় অনিয়ম ক্ষুণ্ন করেছে সার্বিক আর্থিক খাতের ভাবমূর্তি। সকল কাঠামোগত অসঙ্গতিগুলো বিশেষত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দূরীভূত হওয়া প্রয়োজন। বর্তমানে এল ডি সি ভুক্ত দেশের সংখ্যা আছে ৪৮ টি এবং ১৯৭১ সাল পরবর্তী আজ পর্যন্ত মাত্র টি দেশ এল ডি সি থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে -এর মধ্যে সার্কভুক্ত দেশের কেবল মালদ্বীপ রয়েছে যারা তাদের বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করে এই গৌরব অর্জন করেছে। অপরদিকে এল ডি সি থেকে বেরিয়ে আসার স্বপ্নে বিভোর বাংলাদেশ কত দূর অগ্রসর হতে পারে তা দেথার অপেক্ষায় রইলাম দেশের ১৬ কোটি মানুষ।


No comments:

Post a Comment

A BROKEN DREAM- chapter -one

A BROKEN DREAM Status of Rule of Law, Human Rights and Democracy Justice Surendra Kumar Sinha Chief Justice (Rtd.), Supreme Court ...