Header Ads

Bangladesh Is a .....

“ ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ রায় ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ”

                               “ ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ রায় ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ”
                              ===========================================
                                                                                                          --এস এম কামাল হোসেন
রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ,অঙ্গ কিংবা স্তম্ভ হলো বিচার বিভাগ। একটি ঘরের স্তম্ভ বা খুঁটি যদি স্বাধীন ও সঠিক ভাবে দাঁড়াতে না পারে সে ঘর বেশি দিন টিকতে পারে না। তদ্রুপ রাষ্ট্রের ও সে একই অবস্থা। প্রধান বিচারপতি কিংবা বিচার বিভাগ একটি স্বাধীন সাংবিধানিক পদ বা প্রতিষ্ঠান। তাবৎ দুনিয়ার সবাই সবার কাছে দায়বদ্ধ থাকে।বিচার পতি,বিচার বিভাগও কারও না কারও উপর সে অবশ্যই সেরকম দায়বদ্ধ বা অংঙ্গীকারাবদ্ধ। তবে প্রশ্ন সে কী মন্ত্রি,দল,কিংবা সরকারের কাছে দায়বদ্ধ ? নাকি অন্য কোথায়? তবে যেখানেই থাকুক না কেন তাঁর বা তাঁদের দায়বদ্ধতা থাকতে হবে জনসাধারণের প্রত্যাশানুযায়ী আইন কানুন, নীতি নৈতিকতা সর্বোপরি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য । আলোচনা, সমালোচনা চলছে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে । তার আগে আমাদের মত সহজ, সরল ও অতি সাধারণের জানতে হবে ষোড়শ সংশোধনেীতে কী ছিল ? আর বাতিল হওয়ার পর কী ই বা হবে ? তবে এর ও পূর্বে আমাদের জেনে নেওয়া ভালো যে ,বিচার বিভাগের উপর ইতিপূর্বে কাদের কর্তৃত্ব ছিল?
১৯৭২ সালে মূল সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের উপর ন্যস্ত ছিল।
১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে ওই ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত হয়।
 পরে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে
বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে ন্যস্ত হয়।
 ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে উচ্চ আদালতের বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
মোটা দাগে যদি বলা হয় সেটা হলো- ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ষোড়শ সংশোধনী বিল আকারে পাশ হয় যা ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশ হয়। ষোড়শ সংশোধনীতে ছিল বিচার বিভাগের উপর কর্তৃত্ব থাকবে মহান সংসদের হাতে। আর তাই যেহেতু তা বাতিল হয়ে গেল তার ফলে বিচার বিভাগের উপর কর্তৃত্ব থাকল না সংসদ সদস্য কিংবা পার্লামেন্টের উপর। বিচার বিভাগের উপর কর্তৃত্ব থাকবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সেলের উপর । যেটা ছিল জিয়াউর রহমানের আমলে পঞ্চম সংশোধনীতে । প্রাক্তন প্রধান বিচার পতি খায়রুল হক তাঁর আমলে অবশ্য চর্তুদশ সংশোধনীতে জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা গ্রহণ অবৈধ বলা হলেও তাঁর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল সহ বিচারপতিরে সুযোগ সুবিধা বর্ধিতকরণ কে অবৈধ বলেননি।
ষোড়শ সংশোধনীর আর একটু বিস্তারিত জেনে নেই যা না জানলেই নয়ঃ
==================================================
 ষোড়শ সংশোধনীর ৯৬(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রমাণিত অসদাচরণ বা
অসামর্থ্যের কারণে সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতার দ্বারা সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ ছাড়া কোনো বিচারককে অপসারিত করা যাবে না।’
৯৬(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, দফা (২) এর অধীন প্রস্তাব সম্পর্কিত পদ্ধতি এবং কোনো বিচারকের অসদাচরণ বা অসামর্থ্য সম্পর্কে তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি সংসদ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
 সেই তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি এবং অপসারণের প্রক্রিয়া ঠিক করে তৈরি একটি আইনের খসড়ায় গত ২৫ এপ্রিল,২০১৭ নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।
যাই হোক এখন এই ষোড়শ সংশোধনী বাতিল ।
      ষোড়শ সংশোধনীর বাতিলে এমিকাস কিউরি বা আদতালতের বন্ধু ছিলেন যাঁরাঃ
=========================================================
১. ড.কামাল হোসেন।
২. টি এইচ খান।
৩. এ এফ এম হাসান আরিফ।
৪. এম আমীর উল ইসলাম।
৫. রোকনউদ্দিন মাহমুদ।
৬. ফিদা এম কামাল।
৭. এ জে মোহাম্মদ আলী।
৮. এম আই ফারুকী।
৯. আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া।
১০. আজমালুল হোসেন কিউসি।
                                  এমিকাস কিউসিরা কে কোন পক্ষে ছিলেন ?
                               =================================
গুরুত্বপূর্ণ মামলাটির শুনানিতে আপিল বিভাগ আদালত বন্ধু হিসেবে ১০ জন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর বক্তব্য শোনেন। তাদের মধ্যে কামাল হোসেনসহ নয়জনই সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের পক্ষে অর্থাৎ ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পক্ষে মত দেন। ড.কামাল হোসেনের সঙ্গে একই মত পোষণকারীরা হলেন টি এইচ খান, এ এফ এম হাসান আরিফ, এম আমীর উল ইসলাম, রোকনউদ্দিন মাহমুদ, ফিদা এম কামাল, এ জে মোহাম্মদ আলী, এম আই ফারুকী ও আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া। অন্যদিকে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনের পক্ষে অবস্থান জানান শুধু আজমালুল হোসেন কিউসি।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিল রায় নিয়ে কে কী বলেছেন ?
=======================================
 বিচারপতি অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী ‘অবৈধ’ (রায়ে উল্লেখ) ।
 “বলতে দ্বিধা নেই, ষোড়শ সংশোধনী একটি কালারেবল লেজিসলেশন (কোনো কাজ সংবিধানের মধ্যে থেকে করার সুযোগ না থাকলে আইনসভা যখন ছদ্ম আবরণে ভিন্ন প্রয়োজনের যুক্তি দেখিয়ে একটি আইন তৈরি করে), যা রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ, আইন সভা থেকে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ নীতির লঙ্ঘন (রায়ে উল্লেখ) ।
 “এটা সংবিধানের দুটি মূল কাঠামো ৯৪(৪)ও ১৪৭(২) অনুচ্ছেদেরও লঙ্ঘন। একইসঙ্গে সংবিধানের ৭(বি) অনুচ্ছেদকেও আঘাত করে (রায়ে উল্লেখ) ।
 “সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে রুল যথাযথ (অ্যবসলিউট) ঘোষণা করা হল। ষোড়শ সংশোধনী আইন ২০১৪ কালারেবল, এটি বাতিল এবং সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হল ।” (-রায়ে উল্লেখ) ।
 আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন,এ রায় “গ্রহণযোগ্য না”৷ কিন্তু আমরা এর প্রতি শ্রদ্ধাশীল৷
 সংবাদ সম্মেলনে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এবিএম খায়রুল বলেন, ‘‘ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে সংবিধানের অপব্যাখ্যা করা হয়েছে৷ তাই সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ফিরিয়ে আনতে হলে আবারও সংবিধান সংশোধন করতে হবে । সংবিধানে যেহেতু সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ছিল না, সেহেতু এটা রাখা সংবিধান পরিপন্থি৷ আপিল বিভাগের রায়টি অপরিপক্ক, পূর্বপরিকল্পিত ও অগণতান্ত্রিক ৷ ’’
 রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরশেদ অবশ্য এর আগেই বলেন, ‘‘ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের মধ্য দিয়ে সংবিধানে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল আপনা-আপনি চলে এসেছে৷ এর জন্য সংবিধান সংশোধনের দরকার নেই ৷’’
 বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷ তিনি বলেন, ‘‘সরকার এখন বিচার বিভাগের প্রতিপক্ষ হিসেবে অবস্থান নিয়েছে৷’’তাঁর কথায়, ‘‘আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, এই রায়ের যে অবজারভেশন, এটা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের কথা৷ সেটাই সুপ্রিম কোর্ট বলেছে৷ সুতরাং দেশের ১৬ কোটি মানুষ এই রায়ের অবজারভেশনের সঙ্গে আছে এবং তাঁরা একমত ৷’’
 ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ তাই সুপ্রিম কোর্টের রায় সবার মেনে নেয়া উচিত ।
 বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী ড.কামাল হোসেন মনে করেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে কোনো বিতর্কের সুযোগ নেই।
 ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর্যবেক্ষণে ইতিহাস বিকৃতি হয়েছে: আইনমন্ত্রী
 আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, হাই কোর্টের এই রায় ‘সংবিধান পরিপন্থি’।
 ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় কত পৃষ্ঠা ও কী কী আছেঃ
=================================================
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় পর্যবেক্ষণ সহ ৭৯৯ পৃষ্ঠা। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে হলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য। কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ ও পক্ষপাত ছাড়া নিরপেক্ষভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে না পারলে গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারে না। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ছাড়া গ্রহণযোগ্য সংসদ গঠিত হতে পারে না। আর এ কারণে আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থা এবং সংসদ শিশু অবস্থায় রয়ে গেছে।
জনগণ নির্বাচন কমিশন ও সংসদের প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না। এ দুইটি প্রতিষ্ঠানকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাধ্যমে যতদিন পর্যন্ত জনগণের আস্থা ও সম্মানের জায়গায় না আনা যাবে ততদিন গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সংসদ নির্বাচন ছাড়া জ্ঞানী-গুণীদের মাধ্যমে সংসদ গঠিত হতে পারে না। আর এ কারণেই সংসদকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা যাচ্ছে না। সংসদকে পরিপক্ব না করে সংসদের হাতে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা দেয়া হলে সেটা হবে আত্মঘাতী। বিচার বিভাগের জবাবদিহিতা সংসদের কাছে রাখা উচিত নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর বরং উচিত সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া। বাস্তবে দেখা গেছে, যেসব দেশে গণতন্ত্র বিকশিত হয়েছে, নির্বাচন প্রক্রিয়া সঠিকভাবে কাজ করছে এবং সংসদ সদস্যরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হচ্ছেন, সেসব দেশও সংসদের মাধ্যমে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারছে না।
সংসদীয় গণতন্ত্রে নিচের বিষয়গুলো থাকা অপরিহার্য :
(ক) বিশুদ্ধ নির্বাচন,
(খ) শাসনকার্যে সততা, ব্যক্তিগত মর্যাদার বিশুদ্ধতা,
(ঘ) অলঙ্ঘনীয় আইনের শাসন,
(ঙ) স্বাধীন বিচার বিভাগ
(চ) দক্ষ ও গ্রহণযোগ্য আমলাতন্ত্র,
(ছ) গ্রহণযোগ্য বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, সংসদ ও আমলাতন্ত্র এবং
(জ) এসব প্রতিষ্ঠান যারা পরিচালনা করবেন তাদের সংহতি ও সম্মান।
হাইকোর্টে ষোড়শ সংশোধনীর বাতিল হওয়ার পর এ বিষয়ে সংসদে যে ধরনের সমালোচনা হয়েছে এবং যেসব অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে তাতে এটা প্রমাণ করে যে, আমাদের সংসদীয় গণতন্ত্র অপরিপক্ব। সংসদীয় গণতন্ত্র পরিপক্বতা অর্জনের জন্য কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ মেয়াদ টানা সংসদীয় গণতন্ত্র চালু থাকা অপরিহার্য।
পণ্ডিত রাজেন্দ প্রসাদ ভারতে সংবিধান প্রণয়নের সমাবেশে যে বক্তব্য দেন তা উদ্ধৃত করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তার রায়ে। রাজেন্দ্র প্রসাদ বলেছিলেন, সংবিধান যেমনই হোক দেশের কল্যাণ নির্ভর করে কারা কিভাবে দেশ পরিচালনা করছেন তার ওপর। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যদি দক্ষ, সৎ ও চরিত্রবান হন তাহলে সংবিধান ত্রুটিপূর্ণ হলেও তারাই সবচেয়ে ভালো কল্যাণ রাষ্ট্র তৈরি করতে পারবেন। কিন্তু নির্বাচিত প্রতিনিধিদের যদি সততা, দক্ষতা ও চরিত্রের ঘাটতি থাকে তাহলে সংবিধান দেশকে কোনো সাহায্য করতে পারে না। সংবিধান হলো প্রাণহীন একটি যন্ত্রের মতো। এটা প্রাণ পায় কারা এটা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করছে তাদের ওপর নির্ভর করে।
আইন প্রণয়নের মাধ্যমে একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনে জনপ্রতিনিধিদের গুণের কথা বলা হয়েছে এখানে। জনপ্রতিনিধিদের অবশ্যই হতে হবে সৎ ও চরিত্রবান। তাই আইন ত্রুটিপূর্ণ হলেও জনপ্রতিনিধিরা যদি এসব গুণসম্পন্ন হন তাহলে সংসদীয় গণতন্ত্র ধাপে ধাপে একটি ভিত্তির ওপর দাঁড়াবে। আর এমন একটি দেশের জন্যই লাখ লাখ মানুষ লড়াই করেছিল যেখানে থাকবে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন। এ বিশ্বাস পুনরুদ্ধার করতে হবে, অন্যথায় স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে যাবে।আদালত মনে করে অবাধ ও নিরপেক্ষ সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকার সর্বশক্তি দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করবে। আর এর ফল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের শূন্য পদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে পূরণ হবে সরকারের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ ছাড়া। কিন্তু কোনো সরকারই নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালীকরণের কাজ করেনি। এমনকি নির্বাচন কমিশনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য বিরোধী দলও সংসদে বা সংসদের বাইরে এ বিষয়ে কোনো জোরাল ভূমিকা পালন করেনি।
বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকলে বিচারপতিরা দলের হাইকমান্ডের করুণার পাত্রে পরিণত হবে।
ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ে সংসদ সম্পর্কে একটি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে। সেটি প্রধান বিচারপতি তার রায়ে তুলে ধরেছেন। হাইকোর্টের সে পর্যবেক্ষণে বলা হয়, আমাদের অভিজ্ঞতা বলছে, বিপুল সংসদ সদস্যের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের রেকর্ড রয়েছে। কিন্তু সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে এরা উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের বসে পরিণত হয়েছেন এবং বিচারপতিদের স্বাধীন বিচার কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের শতকরা ৭০ ভাগ সংসদ সদস্য ব্যবসায়ী। মাহবুবে আলম ও মুরাদ রেজা কেউই এ তথ্যকে ভুল বলেননি। আমাদের অভিজ্ঞতা বলছে, তারা সংসদে আইন প্রণয়ন বিষয়ে সংসদীয় বিতর্ক বা আলোচনায় আগ্রহী নন। ফলে আজকাল সংসদে পাস করা বেশির ভাগ আইনই ত্রুটিপূর্ণ এবং নিম্নমানের। সংসদে আইন প্রণয়ন বিষয়ে তারা তাদের দক্ষতা প্রমাণ না করে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণ প্রক্রিয়ায় নিজেদের জড়ানোর বিষয়ে আগ্রহী হয়েছেন।
( ৭৯৯ পৃষ্ঠার পর্যবেক্ষণ থেকে সংক্ষিপ্ত )
পাদটীকাঃ
=======
আমাদের সকলের এটা জানা উচিত যে, কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ৬৩ শতাংশ দেশে বিচারক অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে নেই। তদুপরি আমাদের দেশে ইতিমধ্যে এই রায় নিয়ে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে একটা ভুমিকম্প হয়েছে বলে সহজেই টের পাওয়া যায় । পার্লামেন্ট, মন্ত্রীসভা থেকে নানা ধরণের কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে । এমনকি সরকারের ক্যাবিনেট মন্ত্রীরা পর্যন্ত প্রধান বিচারপতিকে তুই, তুমি ভাষা ব্যবহার করছেন । প্রধান বিচার পতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও শুনছি কারও কারও মুখ থেকে। দল ও সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অবশ্য এরই মধ্যে প্রধান বিচার পতির বাসভবনে নৈশভোজ সেরে ফেলেছেন এর পর মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে ও এ বিষয় করণীয় সর্ম্পকে বঙ্গভবনে কথা বলেছেন। আমরা ষোলো কোটি মানুষ দু চোখ মেলে দেখতাছি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার এক উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত !!!
( তারিখঃ ১৫/৮/২০১৭ খ্রিষ্টাব্দ)

No comments