Wednesday, September 27, 2017

                                                      ভারত সরকার ও  মুসলিম জনগোষ্ঠী  
                                                     ==========================
                                                                                               ----এস এম কামাল হোসেন


“বিচারপতি সাচার রিপোর্টের এক দশক পরও মুসলিম আইএএস ও আইপিএস এখনো তিন শতাংশ যেখানে ভারতে মুসলমানদের মোট গড় জনসংখ্যা ১৪শতাংশ”ভারতের মুসলিমদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও শিক্ষাগত অবস্থা সম্পর্কে জানার জন্য কয়েক বছর আগে ভারত সরকার এক বিশেষ কমিটি গঠন করেন। কমিটির সভাপতি ছিলেন দিল্লি হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি রাজেন্দ্র সাচার। তাঁর নেতৃত্বে এই কমিটি সারা ভারত জুড়ে মুসলিমদের উপর বিশাল সমীক্ষা চালায়। এই সমীক্ষায় যেসকল ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়েছিল তা হল, মুসলমানরা কি ধরণের কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত, তাদের বার্ষিক আয় কেমন, শিক্ষাগত যোগ্যতা কেমন, সরকারী সাহায্য ব্যাংকের ঋণ কেমন পান, কেমন এলাকায় এরা থাকেন, সেখানে জল, বিদ্যুত, রাস্তাঘাটের অবস্থা কেমন, সম্পত্তি বা জমিজমার পরিমান কত….ইত্যাদি ইত্যাদি। সাচার কমিশনের রিপোর্ট ৪২০ পৃষ্ঠা । এতে ফুটে উঠেছে ভারত সৃষ্টির পর থেকে বিগত শাসক এবং সেখানকার সমাজ ব্যবস্থায় মুসলমানরা যে কত বঞ্চনা অবহেলার শিকার তা এই কমিশনের প্রতি পৃষ্ঠার পরতে পরতে।মোট বিষয় যেটা দাড়ায় সেটা হলো গড়ে সে দেশে মুসলানদের সংখা অনুপাতের চেয়ে সরকারি, অধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের তাদের প্রতিনিধিত্ব খুবই নগন্য। সেই সাথে সামাজিক, অর্থনৈতিক নানা অন্যায় অত্যাচারের শিকার ভারতের মুসলমানরা। যেখানে ভারত সৃষ্টির প্রাক্কালে মুসলমানদের উচ্চ পদে যে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ছিল তার চেয়ে অর্ধেকে নেমে এসেছে তার ভারতমাতার সুযোগ্য (!) শাসকগনের কারণে। তার পর কমিশনের ছিল নানা সুপারিশ । আর তার বয়স হলো ১০ বছর । তারপরও তা প্রতিফলন তো ঘটেই নাই বরং আরো কমেছে সেখানকার মুসলমানদের নাগরিক সুবিধা সমূহ ।
সাচার কমিটির অনুমোদন ছিল মুসলিমদের মধ্যে আইএএস ও আইপিএস এর সংখ্যা বাড়াতে হবে। কিন্তু দশ বছর পরও সেই করুণ চিত্রের কোন পরিবর্তন হয়নি। আইএএস এর সংখ্যা খুব সামান্য বাড়লেও আইপিএস এর সংখ্যা বরং কমেছে।
নভেম্বর ২০০৬ এ সাচার কমিটির রিপোর্ট জমা পড়ে। তখন মুসলিম আইপিএস ছিল ৪ শতাংশ; ৩২০৯ জনের মধ্যে ১২৮ জন। জানুয়ারী ২০১৬ তে সেই সংখ্যা কমে দাড়িয়েছে ৩.১৯ শতাংশ, ৩৭৫৪ জনের মধ্যে ১২০ জন।
সিভিল সার্ভিসে সুযোগ পেতে হলে ইউপিএসসি পরীক্ষা দিয়ে অথবা রাজ্যের সিভিল সার্ভিস থেকে পদোন্নতি পেতে হয়। রাজ্যগুলির সিভিল সার্ভিস থেকে যেখানে ২০০৬ -এ ৭ % পদোন্নতি হয়েছিল, ২০১৬ তে সেই সংখ্যা নেমে দাড়িয়েছে ৩.৮২ শতাংশ। অবশ্য ইউপিএসসি দিয়ে এসেছেন তাদের সংখ্যা ২.৭ (২২৯৭ এর মধ্যে ৬৩) শতাংশ থেকে ২.৯ শতাংশ হয়েছে (২৬০৪ জনের মধ্যে ৭৬ জন)। সাচার রিপোর্ট প্রকাশ হবার সময় যেটা ছিল ৩% সেটা বর্তমানে ৩.৩২ শতাংশ।
“মুসলিমদের জনসংখ্যা যেখানে ১৪% সেখানে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের অবস্থা খুবই করুন” বলেন পোস্ট সাচার ইভ্যালুয়েশন কমিটির প্রধান ডাঃ অমিতাভ কুণ্ডু।
উল্লেখ্য ১৭২ জন যারা সরাসরি ইউপিএসসি দিয়ে এসেছেন তাদের মধ্যে ৪৮ জন উত্তর প্রদেশের, ২২ জন জম্মু কাশ্মীরের আর ৩৪ জন বিহারের।
শিক্ষা ক্ষেত্রে মুসলিমদের অবস্থা করুণ ও শোচনীয়। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘মুসলিমরা দু ধরনের অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। একদিকে শিক্ষার স্তর নিম্ন, অন্যদিকে শিক্ষার গুনগত মানও নিম্ন। কোন কোন ক্ষেত্রে মুসলিমদের আপেক্ষিক অংশীদারি দীর্ঘকাল ধরে জাতি-ব্যবস্থার শিকার তপশিলি জাতির মানুষদের চেয়েও খারাপ’। পশ্চিমবঙ্গ বিহারের এক হাজার মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামে কোন বিদ্যালয়ই নেই। সারা দেশে মুসলিম প্রধান গ্রাম গুলির এক তৃতীয়াংশে কোন বিদ্যালয় নেই। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় তো নাইই। রিপোর্ট অনুযায়ী, শহর অঞ্চলে মুসলিমদের অন্তত ৬০% স্কুলের দরজায় পা দেবার সৌভাগ্যও হয়নি। উচ্চশিক্ষাতেও মুসলিমদের অবস্থা খুব খারাপ। সারা দেশে প্রতি ১০০ জন স্নাতকের মধ্যে মুসলমান ৬.৩, তপশিলি জাতি ৮.২, অন্যরা ৮৫.৫। টেকনিক্যাল স্নাতকের ক্ষেত্রে মুসলিমদের অবস্থা আরো খারাপ। ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট এর সবকটি শাখা মিলিয়ে ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে মাত্র ১.৩ শতাংশ মুসলমান। এর কারণ শুধুই সরকারী অমনোযোগীতা, স্কুল কলেজের অভাব। অনেকে আবার বলেছেন মুসলিমরা ছেলেমেয়েদের মাদ্রাসায় পাঠান, স্কুলে নয়। তাই তাদের সঠিক শিক্ষা হয়না। কমিটির এই ব্যাপারেও সমীক্ষা চালিয়েছে। রিপোর্ট মোতাবিক মুসলিম শিশুদের মধ্যে মাত্র ৪% মাদ্রাসায় যায়। মুসলিমদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৫৯.৯%। এটা জাতীয় গড় ৬৫.১% অপেক্ষা অনেক কম।
স্বাধীনতা অর্জনের সময় চাকরীতে মুসলিমদের অবস্থান ছিল খুব ভালো। তখন চাকরিতে মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব ছিল ৩৪%। সাচার কমিটির রিপোর্ট প্রকাশিত হব্র পর এ-কথা বলেওছেন সিনিয়ার সমাজবাদী মন্ত্রী মুহাম্মাদ আযম খান। তিনি বলেন, ‘১৯৪৭ সালে যখন দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয় তখন দেশের সরকারী চাকরিতে মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব ছিল ৩৪%, আজ এটা দাড়িয়েছে মাত্র ১ শতাংশে। এমনকি তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেনীর কর্মসংস্থানে মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব দলিতদের থেকেও কম।


সূত্র : রাজেন্দ্র সাচার কমিটির রিপোর্ট থেকে সংক্ষেপিত।

No comments:

Post a Comment

A BROKEN DREAM- chapter -one

A BROKEN DREAM Status of Rule of Law, Human Rights and Democracy Justice Surendra Kumar Sinha Chief Justice (Rtd.), Supreme Court ...