Tuesday, September 26, 2017



বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতীয় সন্ত্রাসঃ
===========================
ভূমিকাঃ
ভূপেন হাজারিকার সেই বিখ্যাত গানটি দিয়ে শুরু করি..মানুষ মানুষের জন্য,জীবন জীবণের জন্য একটু সহানুভূতি কী মানুষ পেতে পারে না?..মানুষ যদি সে না হয় মানুষ, দানব কখনও হয় না মানুষ,..... না,আমরা ভারতের কোনো সহানুভূতি কিংবা করুণা ভিক্ষা চাই না,চাই তাদের কাছ থেকে আমাদের প্রতিবেশী সূলভ অধিকারটুকু।যা আমাদের একান্ত অধিকার আন্তর্জাতিক আইন কানুন অনুযায়ী।কিন্তু ভারত যে আজ দানবীয়,অশুরের শক্তিতে মূর্তীমান।যার ভীতর প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নাগরিকের প্রতি সকল মানবীয় গুণাবলী অদৃশ্য।ভারত আসলে ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রের মুখোশ পরিহিত ভয়ংকর রাষ্ট্র।তাদের আছে দানবের মত শক্তি।তাই তারা আন্তর্জাতিক বিধি-বিধান, আইন-কানুন লঙ্ঘন করে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে অন্য সার্বভৌম রাষ্ট্রের নাগরিকদের সীমান্তে পাখির মত গুলি করে হত্যা করে। সত্যিকার অর্থে ভারত আজ সর্বদা সৎ ও নিরীহ প্রতিবেশীকে উত্যক্ত করে এক ধরনের দানবীয় আনন্দ উপভোগ করা ভারতের একটি নেশায় পরিণত হয়েছে। আর এই নেশার পাত্র হচ্ছে বাংলাদেশ। ভারতের চোখে-মুখে শুধু আধিপত্যবাদের নগ্ন পরাক্রম ছাড়া বাংলাদেশ যাত্রা লগ্ন থেকে অন্য আর কিছু দেখতে পায়নি।
পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন দেশের অভ্যুত্থান হয়েছে সেও ৪৬ বছর পূর্ণ হয়েছে। তবে এই স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করতে আমাদের ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মদান আর দুই লাখ মা বোনের ইজ্জত লুটিয়ে দিতে হয়েছে। সে কারণেই বিশ্বের দরবারে এ জাতি আত্মমর্যাদাশীল, দেশপ্রেমিক ও বীরের জাতি বলে গৌরব অর্জন করেছে।বাংলাদশে জন্মের পর পরই ভারত বাংলাদেশের উপর আগ্রাসী আক্রামণ চালাচ্ছে না ভাবে। তাদের সীমান্তে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বর্বরতা সব সীমা-পরিসীমা ছাড়িয়ে গেছে। নিছক তুচ্ছ ঘটনার কারণেও নিরীহ গ্রামবাসী তাদের নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতার হাত থেকে রক্ষা পায় না। শান্তির সীমান্ত প্রতিষ্ঠার সব প্রত্যাশা গুঁড়িয়ে দিয়ে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর বর্বরতায় দু’দেশের সীমানা হচ্ছে রক্তাক্ত। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এখন এক রক্তাক্ত প্রান্তর।
গত ২০/৬/২০১৭ তারিখে ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে দুই জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে একজন স্কুলছাত্র। ঐ দিন বেলা ১১টার দিকে মহেশপুর উপজেলার খোসালপুর বিজিবি বিওপির ওপারে ভারতের নদিয়া জেলার কুমারীপাড়া বিএসএফ ক্যাম্পের কাছে এ ঘটনা ঘটে। মহেশপুর উপজেলার নেপা ইউনিয়নের খোসালপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে সোহেল রানা। অপরজন পাশের শ্যামকুড় ইউনিয়নের শ্যামকুড় গ্রামের কাওসার আলীর ছেলে হারুন অর রশিদ।খোসালপুর মাঠের কাছে ভারতে কুমারীপাড়ায় গুলি চালিয়ে দু’জনকে হত্যা করে লাশ নিয়ে যায়।
বাংলাদেশের সীমানাজুড়ে হত্যাকান্ডের কিছু পরিসংখ্যানঃ
শুধু বাংলাদেশের ভূমি দখল করেই নয়- হিংস্র দানব প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত, দক্ষিণ এশিয়ার অক্টোপাস ভারত ১৯৭১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ১০,৪২০ জনের অধিক বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে। ৫ হাজারের বেশি বাংলাদেশী অপহরণ করেছে। ৮২৫ জন নারী ও শিশু ধর্ষণ করেছে।
ভারতের ষড়যন্ত্রঃ
বাংলাদেশের কাছ থেকে ট্রানজিট/করিডোর আদায় করাও ভারতের দীর্ঘমেয়াদী ষড়যন্ত্রেরই অংশ। বাংলাদেশের বুকের উপর দিয়ে করিডোর সুবিধা লাভে ভারতের দীর্ঘ প্রয়াস, বাংলাদেশে-ভারত সম্পাদিত চুক্তিসমূহ বাস্তবায়িত না হওয়া, বহু পাক্ষিকতায় ভারতের পরিকল্পিত অনাগ্রহ, প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়ে রেলওয়েকে কেবল নিজের স্বার্থে ব্যবহারকল্পে ভারতীয় প্রচেষ্টা, বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য অসমতা, বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের অন্যান্য দেশকে ভারত নির্ভরকরণ প্রচেষ্টা, বিশ্বায়ন ও উদারীকরণের নামে ভারত নির্ভরতা বৃদ্ধিকরণ, ভারতের দীর্ঘমেয়াদী সামরিক লক্ষ্য সমূহ অর্জন প্রচেষ্টা, সীমান্ত চিহ্নিতকরণ, সীমান্তের বিভিন্ন অংশ অমিমাংসিত রাখা, ছিটমহল সমস্যা, তিন বিঘা করিডোর, সীমান্ত সংঘর্ষ, পুশইন, বাংলাদেশী শরণার্থী নাম দিয়ে ভারতীয়দের বাংলাদেশে পুশব্যাক, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা, বিএসএফের পাদুয়া দখল করে নেয়া, সীমান্তে কাঁটা তারের বেড়া, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় বাহিনীর তৎপরতা, বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বলকরণে ভারতীয় প্রচেষ্টা, বাংলাদেশ বিরোধী ভারতীয় প্রচারণা, চোরাচালানকে উৎসাহিত করা, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, বাংলাদেশে কর্মরত ভারতীয় কূটনীতিকদের আধিপত্যবাদী আচরণ ও অতিউৎসাহ, বাংলাদেশের ব্যাপক জনগণের বিশ্বাস ও আদর্শের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণকারীদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান, বাংলাদেশের উদীয়মান শিল্প সেক্টরকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য বহুবিধ ষড়যন্ত্র ও ডাম্পিং, ভারতের পানি আগ্রাসন তথা অভিন্ন নদীগুলির পানি বণ্টন সমস্যা- গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন-ফারাক্কা বাঁধ, তিস্তা নদীর পানি বণ্টন-গজলডোবা বাঁধ মরণ ফাঁদ, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ, সারী নদীর উৎসমুখ তথা মাইন ফ্রং নদীতে বাঁধ নির্মাণ, ফেনী নদীর পানি লুণ্ঠন, আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্প, খোয়াই নদীর উৎস মুখে বাঁধ, মনু নদীর উজানে মিনি ফারাক্কা, গোমতী নদীর উজানে ভারতীয় বাঁধ, পুনর্ভবা, কোদলা, ধরলা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র নদীর উজানে বাঁধ; বাংলাদেশের যুব সমাজকে ধ্বংসে সীমান্তব্যাপী ফেনসিডিলের অসংখ্যা কারখানা স্থাপন, বাংলাদেশের সমুদ্র সীমা ও সমুদ্রের তলদেশের সম্পদ দখলের অপতৎপরতা, অপদখলী ভূমি হস্তান্তর না করা, অনিষ্পন্ন সীমানা নির্ধারণে সই হওয়া প্রটোকল অনুসাক্ষরে বিরোধিতা, মহুরীর চরের সমস্যা, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ লুণ্ঠন, সীমান্তে বিএসএফের নির্যাতন তথা পরিকল্পিত ভারতীয় সীমান্ত সন্ত্রাস ইত্যাদিকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোন অবকাশ নেই। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির জন্য ভারত নিজেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে দায়ী।
বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রতি হুমকি স্বরূপ নানা ভারতীয় আগ্রাসী অপতৎপরতার মধ্যে রয়েছে :
১. পারিসরিক আগ্রাসন ও সীমান্ত হামলা।
২. ভারতীয় সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসন।
৩. দেশের অস্তিত্ববিনাশী গোয়েন্দা তৎপরতা।
৪. ভারতের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক আগ্রাসন।
৫. সংবাদ মাধ্যম ও তথ্য মাধ্যমে ভারতীয় আগ্রাসন।
৬. বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতীয় প্রভাব ও আগ্রাসন।
বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক নাগরিককে যা যা মনে রাখতে হবে বা করতে হবে:
১.সীমান্ত হত্যা বন্ধে ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য ভারতীয় পণ্য বর্জনসহ সব ধরনের প্রীতি আয়োজন বন্ধ করা উচিত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা কারো দয়া বা করুণার দান নয়। তাই আজকের এই কঠিন দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে সচেতন দেশপ্রেমিক জনসাধারণকে ঐকমত্য প্রদর্শন করে দৃঢ় মনোবল নিয়ে সকল প্রকার অনিয়ম ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
২. আসলে ভারতকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চায়। ভারতের সাথে সম্প্রীতির সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সৎ মানসিকতার কোন অভাব নেই বাংলাদেশের। কিন্তু ভারতের তেমন মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায় না। শুধু সীমান্তে বর্বরতাই নয়, তিস্তার পাটি বণ্টন, সমুদ্রসীমা নির্ধারণ, টিপাইমুখ বাঁধসহ বিভিন্ন ইস্যুতে এটি পরিষ্কার হয়ে উঠেছে, ভারত বাংলাদেশের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাচ্ছে না।
৩. ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হত্যাকান্ড, নির্যাতন ও নিপীড়ন থেকে এদেশের নাগরিকদের রক্ষার জন্য সরকারের এখনই পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। এ ধরনের হত্যাকান্ড বন্ধে ভারতের কাছে প্রতিবাদ জানানো দরকার। একই সাথে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে এ ব্যাপারে আরো সক্রিয় করা দরকার।
আমাদের সরকারকে মনে রাখতে হবে, প্রতিবেশী রাষ্ট্র যত বড় ও শক্তিশালী হোক না কেন এ ধরনের হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ করা সংবিধান, মানবাধিকার এবং নৈতিক দিক দিয়ে অত্যন্ত জরুরী। এ দেশের মানুষ দেশের সার্বভৌমত্ব ও নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার গঠন করে থাকে, নিজ দেশের বিরুদ্ধে অন্যায় কর্মকান্ডে নীরব থাকার জন্য নয়।
৪. সীমান্তবর্তী এলাকায় কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এতে বাংলাদেশী নাগরিকদের সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে কাজ করতে যাওয়া বন্ধ হবে।
৫. আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক কূটনীতিকে বাংলাদেশের পক্ষে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। সীমান্তে মানবাধিকার লংঘনকারী ও সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের বিষয়ে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমর্থন সহযোগিতা লাভে বাংলাদেশকে সফল হতে হবে।
৬. সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিক হত্যা বন্ধে ভারতকে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৭. অন্ধ ভারত প্রীতি একটি ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গী। এ দৃষ্টিভঙ্গী থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
তারিখঃ২৩জুন, ২০১৭ ইং।
লেখক: এস এম কামাল হোসেন ।
























সহযোগীতায়ঃ
দৈনিক সমকাল,দৈনিক নয়াদিগন্ত,দৈনিক যুগান্তর,দৈনিক ইত্তেফাক, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ প্রতিবেদন, দৈনিক ইনকিলাব , দৈনিক আমার দেশ।

No comments:

Post a Comment

A BROKEN DREAM- chapter -one

A BROKEN DREAM Status of Rule of Law, Human Rights and Democracy Justice Surendra Kumar Sinha Chief Justice (Rtd.), Supreme Court ...