Header Ads

Bangladesh Is a .....

                                         “ রোহিঙ্গারা যেভাবে হারালেন তাদের স্বাধীন জন্মভুমি ”
                                         =======================================
আরাকান রাজ্যের মুসলিম জনগোষ্ঠীরাই বিশ্বের একমাত্র রাষ্ট্রের নাগরিকবিহীন জনগোষ্ঠী । বিশ্বের নিষ্ঠুরতম নির্যাতনের মাধ্যমে পৈতৃক ভিটেমাটি ছাড়া বাস্তুছাড়া আজ তাঁরা। কিন্তু এমনটি হওয়ার কথা ছিল না । শুধু ভাগ্যের নিষ্ঠুর আচরণের ফলেই আজকে তাদের এই পরিণতি!
রোহিঙ্গা মুসলমানরা হঠাৎ করে গিয়ে হাজির হয়নি রাখাইন প্রদেশে তথা আরাকানে। তারা সেখানে বসবাস করছে হাজার হাজার বছর ধরে। আরাকান ছিল একসময় স্বাধীন বাঙালী মুসলিম অধ্যুষিত রাজ্য তার প্রমান আপনিও হতে পারেন যদি আপনি জেনে থাকেন যে, মহাকবি আলাওল আরাকান রাজসভার কবি ছিলেন।
এই উপমহাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সর্বপ্রথম যে ক’টি এলাকায় মুসলিম বসতি গড়ে উঠে, আরাকান তথা বর্তমান রাখাইন প্রদেশ তার অন্যতম। রোহিঙ্গারা সেই আরকানী মুসলমানদের বংশধর। এক সময় আরাকানে স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় ১৪৩০ সালে । তাদের প্রতিষ্ঠিত মুসলিম শাসন দুশ’ বছরেরও অধিককাল স্থায়ী হয়। এ সময় আরাকানের রোসাঙ্গ রাজসভাই বাংলা সাহিত্যের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। যা সপ্তদশ শতাব্দীর দৌলত কাজী, আলাওল, মরদন ও নাসুল্লা খানের মতো অনেক কবি-সাহিত্যিকের বর্ণনাতেও এসব বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। ১৬৩১ থেকে ১৬৩৫ সাল পর্যন্ত আরাকানে মারাত্মক দুর্ভিক্ষ হয়। এরপর মুসলিস শাসনের অবসান ঘটে। ১৬৬০ সালে আরাকান রাজ্য সান্দথুধম্মা নিজ রাজ্যে আশ্রিত মোগল শাহজাদা সুজাকে সপরিবারে হত্যা করে। এরপর শুরু হয় মুসলমানদের উপর তার নিপীড়ন ও নির্যাতন। প্রায় সাড়ে তিন শ’ বছর মুসলমানদের এই দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে কাটাতে হয়। ব্রিটিশরা যখন ১৭৫৭ সালে চট্টগ্রামের দখল পায় তখন আরাকান ছিল একটি স্বাধীন রাজ্য এবং চট্টগ্রামের ওপর দাবি আরাকানিরা তখনো পুরোপুরি ছাড়েনি। ১৭৮০ সালে বর্মী রাজা বোধাপোয়া আরাকান দখল করে নেয়। সেও ছিল ঘোর মুসলিমবিদ্বেষী। বর্মী রাজা ঢালাওভাবে মুসলমানদের শহীদ করে। ১৮২৮ সালে বার্মা ইংরেজ দখলে গেলে অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন ঘটে। তবে ১৯৩৭ সালে বার্মার স্বায়ত্তশাসন লাভের পর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ব্যাপক রূপ নেয় এবং অন্তত ৩০ লাখ মুসলমান শহীদ ।
এই অবস্থায় ১৭৮৪ সালে আরাকান চলে যায় বার্মা সাম্রাজ্যের অধীনে। আরও পরে, বার্মা যখন মণিপুর ও আসাম দখল করে নেয়, ১৮২৪ সালে প্রথম ইঙ্গ-বার্মা যুদ্ধ হয়, যার ফলে আরাকান ও আসাম চলে যায় ব্রিটিশদের অধীনে এবং আরও দুটি যুদ্ধের পর ১৮৮৫ সালে পুরো বার্মা চলে আসে ব্রিটিশদের দখলে। হয়। ১৯৪৮ সালে বার্মা স্বাধীনতা লাভ করে। কিন্তু মুসলমানদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। স্বাধীন দেশের সরকার আজ পর্যন্ত তাদের নাগরিক ও মানবিক অধিকার দেয়নি। অত্যাচার নির্যাতন ও বিতাড়নের মুখে বহু রোহিঙ্গা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহুদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। ১৯৮২ সালে সে দেশের সরকার যে নাগরিকত্ব আইন করেছে, তাতে তিন ধরনের নাগরিকের কথা বলা হয়েছে। এর কোনটির মধ্যেই রোহিঙ্গারা নেই। সরকারীভাবে তাদের সে দেশে বসবাসকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের সাংবিধানিক ও আর্থ-সামাজিক অধিকার নেই। তারা একার্থে বন্দী। কারণ মিয়ানমারের অন্য স্থানে তারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া যেতে পারে না। আর এর পরের ইতিহাস তো আমরা নিজের চোখেই দেখছি....... ।
সংকলনেঃ এস এম কামাল হোসেন।

No comments