Header Ads

Bangladesh Is a .....

“ বিচার বিভাগ বনাম সরকার ও বাংলাদেশ পেনড্রাইভ রায় “

“ বিচার বিভাগ বনাম সরকার ও বাংলাদেশ পেনড্রাইভ রায় “
=========================================
                                                      --- এস এম কামাল হোসেন
প্রথমেই আমাদের দেশের এক জন সফল (!) প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সর্ম্পকে দু’এক কথা না বললেই নয়।পত্রিকা মারফত আমরা জানতে পারলাম আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা সর্ম্পকে সমালোচনা করতে গিয়ে অজ্ঞাতসারে নিজের সম্পর্কে এক কঠিন সত্য বলে ফেলেছেন। তিনি বলেছেন,“আইন পেশায় যোগদানের সময় তাঁর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী তাঁকে বলেছিলেন, ‘যে দেবতা যে মন্ত্রে তুষ্ট, সেই দেবতাকে সেই মন্ত্রেই সুধাবা।” তিনি যে সেই শিক্ষাটি ভালোভাবেই রপ্ত করেছেন, তা তাঁর দু’টি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে গেছে এবং আমরা ষোলো কোটি মানুষ তাঁর পুরস্কৃত চেয়ারের দিকে তাকালেই তা আরও স্পষ্ট করে দেখতে পাই।
বিচার বিভাগ একটি রাষ্ট্রের মূল তিনটা স্তম্ভের একটি । বিচার বিভাগকে মানুষের শেষ আশ্রয়ের স্থল ভাবা হয়। অনেক সময় ব্যক্তি,গোষ্ঠী কিংবা রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিধিবিধানের উপযুক্ততা কিংবা তাদের সততা,পবিত্রতা, ন্যায়বিচাররের মানদন্ড হিসেবে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে বিচার বিভাগ ব্যবহার করা এজন্য যে, বিচার বিভাগই হলো এগুলো বিচারের পরিমাপক বা মানদন্ড।পৃথিবীর বহুদেশে বিচার বিভাগের উপর সরকার নাখোশ হয় নানা কারণে। কিনতু কোন কেস স্টাডিতেই বিচার বিভাগের ক্ষতি কিংবা অসম্মান করে সরকার সুবিধা করতে পারেনি বরং সরকারই ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ ছাড়া আরও তিনটি দেশ- শ্রীলংকা, নেপাল এবং সর্বশেষ পাকিস্থানের বিচার বিভাগের উপর মানুষের দৃষ্টিপাত হয়েছে গভীর ভাবে। সে ক্ষেত্রে পাকিস্থানই একমাত্র ব্যতিক্রম যে রুলিং গর্ভমেন্ট বিচার বিভাগকে অংগুলি প্রদর্শণ করে নি। বরং নওয়াজ শরীফ একজন ঝানু রাজনীতিবীদ হিসেবে বিচার বিভাগের কাছে মাথা নত করে নাকে খত দিয়ে চলে গেছে । চলে গেছে তাঁর কৃতকর্মের জন্য। এ বিষয়টা আমরা অনেকেই অবগত আছি ।
অপর দুটোর একটা হলো –নেপালে।মাত্র মাস তিনেক পূর্বে নেপালের প্রধান বিচারপতি সুশিলা কার্কি কে অপসারণের জন্য পার্লামেন্টে অভিশংসনের প্রস্তাব এনেছিল ক্ষমতাসীন জোটের প্রধান দুই শরিক। পুলিশ প্রধান পদে সরকারের নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় তাঁকে অপসারণের ওই তোড়জোড় শুরু হয়েছিল। কিন্তু প্রতিবাদে ক্ষমতাসীন জোটের ক্ষুদ্র এক শরিক উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। সুপ্রিম কোর্টও অভিশংসন প্রস্তাবের কার্যকারিতা স্থগিত করে দেন। সেই স্থগিতাদেশ নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই গত জুন মাসে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশিলা কার্কির অবসরে যাওয়ার সময় হয়ে যায়।
অপর ঘটনা হলো শ্রীলঙ্কায়-২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কায় প্রধান বিচারপতি শিরানি বন্দরনায়েক কে বেআইনিভাবে অপসারণ করেন তখনকার প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষে। তবে তার জন্য তাঁকে চরম রাজনৈতিক মূল্য দিতে হয়েছে। কয়েকটি মামলায় সরকারের বিরুদ্ধে রায় দেওয়ায় তাঁকে অপসারণ করে তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেলকে তিনি ওই পদে নিয়োগ দেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে তা নিয়ে সৃষ্টি হয় তুমুল প্রতিক্রিয়া। আইনজীবীরা আদালত বয়কট করেন এবং অন্য বিচারপতিরাও নতুন প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কোনো বেঞ্চে বসতে অস্বীকৃতি জানান। তবে ইতিমধ্যে নির্বাচনে রাজাপক্ষে পরাজিত হলে মাত্র ১৫ দিনের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা বিচারপতি শিরানি বন্দরানায়েকেকে অভিশংসনের সিদ্ধান্ত বেআইনি বলে বাতিল করেন। একই সঙ্গে, তাঁর জায়গায় যাঁকে বসানো হয়েছিল, তাঁর নিয়োগও বাতিল করেন সিরিসেনা। শিরানি বন্দরনায়েকে প্রধান বিচারপতির পদে ফিরে পান।
আরও একটি ঘটনা যা এখানে উল্লেখ করা যায়, যা মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে আমরা বিবিসির মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, থাইল্যান্ডের সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান দেশ ছেড়ে পালিয়েছে ঐ বিচার বিভাগের রায়ের কারণেই।
এবার আসি পেনড্রাইভ রায় নিয়ে। আমার সাথে আপনারা সবাই একমত হবেন যে, এ্ই পেনড্রাইভ রায়ের(শব্দ দু’টার)জনক বা শ্রষ্টা এই সরকার কিংবা সরকারের এম পি মন্ত্রীরা। এর আগে এই শব্দ দু’টা(পেনড্রাইভ রায়) আমরা শুনি নাই। সরকারের গুরত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল কর্তা ব্যক্তিরা যখন এটা অবলীলায় ব্যবহার করেন তখন সাধরণ নাগরিকের মাঝে স্বাভাবিক প্রশ্ন জাগে সত্যিই কী পেনড্রাইভ রায় হয়? সরকারের এমপিদের দাবী একটি ইংরেজী পত্রিকার সম্পাদক এই বিশাল ৭৯৯ পৃষ্ঠার রায় টি লিখে দিয়েছেন। মূলত: তাঁদেরএ দাবী দ্বারা জনগণরে কাছে একটি ভুল বার্তা পৌঁছে যাচ্ছে আর তা সরকার , বিচার বিভাগ কিংবা রাষ্ট্র কারও জন্যই সুখকর নয়।একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে আমরা সরকারের দায়িত্বশীল পদস্থ লোকদের কাছ থেকে এ ধরণের কথাবার্তা আর শুনতে চাই না। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভের মধ্যে দুরত্ব তৈরি হতেই পারে । তবে সে ক্ষেত্রে সরকার কে প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়ে দেখতে হবে সমস্যা কোথায়। যেখানে ব্যথা সেখানেই ঔষধ দিতে হবে। আর সরকার যদি মনে করে সর্বাঙ্গে ব্যথা ঔষধ দিব কোথা আর মাথা ব্যথার জন্য মাথা কাটা ছাড়া উপায় নেই তাহলে আমাদের মত অতিসাধরণের কাছে তার জবাব নেই।।
তারিখঃ২৫/৮/২০১৭ খ্রিষ্টাব্দ

No comments